মুহাম্মদ দিদার হোসাইন, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) : লবণের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপকূলের লবণ চাষিরা, ন্যায্যমূল্য না পেলে আগামীতে লবণ উৎপাদন কাজে চাষিদের আগ্রহ কমার শঙ্কা করছে লবণ সমিতি ও লবণ শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন নেতারা।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বাঁশখালী উপজেলার গ-ামারা, খাটখালী, বড়ঘোনা, শীলকূপ, শেখরখীল, ছনুয়া, পুঁইছড়ি, পশ্চিম চাম্বল, সরল, জালিয়াঘাটা, রতœপুরসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকাঘুরে লবণ মাঠে চাষিরা উৎপাদন কাজে এখনও পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছে।

এ সময় লবণ শ্রমিক, রশিদ আহমদ, জাকের হোসেন, নুরুল আজিম সিকদার, রুহুল কাদের, নুরুল কাদের, আব্দুর রহিম, মো. করিম, আজম উদ্দীন, নুরুল ইসলাম, ওয়াহিদুল ইসলাম, নজির আহমেদ, নুরুল আবছার, সৈয়দুল আলম, বাদশাহ মিয়া, ফোরকান, আলি ইসলামসহ বেশ কয়েকজন লবণ চাষিরা বলেন, বিগত সময়ে যে লবণ মণ প্রতি ৬০০-৭০০ টাকা বিক্রি হতো সেই লবণ এবছর ১৫০-১৭০ টাকার উপরে পাচ্ছে না লবণ চাষিরা। এসময় তারা আরও বলেন, লবণ মাঠ (জমি) কানি প্রতি বাৎসরিক লাগিত বাবত ৪০-৫০ হাজার টাকা, পানির স্কিম খরচ ১৫ হাজার টাকা, তেরপাল খরচ, শ্রমিক বেতন, মাঠ সংস্কারসহ লবণ উৎপাদনে বহু অর্থ ব্যয় হলেও লবণের ন্যায্যমূল্য পায় না শ্রমিকরা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে লবণ শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিনিয়ত লোকসানের শিকার হয়ে থাকে বলে অভিযোগ করছে লবণ চাষিরা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে ধারকর্জ করে লবণ উৎপাদন করলেও যুগযুগ ধরে অবহেলার শিকার হচ্ছে উপকূলের লবণ চাষিরা।

বাঁশখালী উপজেলা লবণ শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়ন সভাপতি মোস্তফা আলী ও সেক্রেটারি ফরিদুল আলম জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু লবণ মিল বন্ধ হয়ে গেছে বলে শুনেছি, এছাড়াও দেশে উৎপাদিত লবণের যথাযথ মুল্যায়ন না করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি পায়তারা চলছে।দেশে উৎপাদিত লবণের বেশিরভাগ লবণ মাঠ পর্যায় থেকে মিল মালিকরাই সংগ্রহ করতেন। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে লবণ মিল মালিকরা মাঠ পর্যায় থেকে কোনো ধরনের লবণ সংগ্রহ করছেনা, আর লবণ চাষিরাও লবণ ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। লবণ উৎপাদন শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস ও বাণিজ্য উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে লবণ শ্রমিক কল্যাণ ইউনিয়নের এই নেতারা বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে লবণ সংগ্রহ করতে সরকার ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, বন্ধ হয়ে পড়া লবণ মিল গুলো চিহ্নিত করে দ্রুত চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে, লবণ উৎপাদনকারী শ্রমিকদের জন্যে সরকারি ভাবে সুদ বিহীন ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই লবণ চাষিদের জন্যে সরকারি সহায়তা ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

সমুদ্রে মৎস্য শিকার বন্ধকালীন সময়ে মৎস্য আহরণকারী বা জেলেরা সরকারি বরাদ্দের চালসহ যেসব সহযোগিতা পেয়ে থাকেন অনুরূপভাবে লবণ শ্রমিকদের জন্যও সরকারি সহযোগিতার উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানিয়ে তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এর পক্ষ থেকে লবণ উৎপাদন ও শ্রমিকদের কল্যাণে সারা দেশে নানা ধরনের উদ্যোগের কথা থাকলেও বাঁশখালীতে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ বা সহযোগিতা দেখা যায়নি। এছাড়াও আনসারুল হক নামে উপজেলা (বিসিক) কর্মকর্তা রয়েছেন তিনি বাঁশখালীতেও থাকেন না বলে অভিযোগ করেন তারা। লবণ উৎপাদনে উপকূলের চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে মনিটরিং করার উদ্যোগে গ্রহণ এবং দেশের অর্থনৈতিক খ্যাতকে আরও সমৃদ্ধি করতে দেশে উৎপাদিত লবণের যথাযথ মুল্যায়নের স্বার্থে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি প্রবণতা রোধ করতে সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।

এবিষয়ে জানতে বাঁশখালীতে দায়িত্বরত (বিসিক) কর্মকর্তা আনসারুল হকের সাথে যোগাযোগের একাধিকবার চেষ্টা করলেও তার মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায়নি।