যশোরের অভয়নগরে এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বুকসমান বালুতে পুঁতে রেখে কয়েক দফায় চার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উপজেলার বহিস্কৃত বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ভোরে খুলনার রোজ গার্ডেন-২ নামের এক আবাসিক হোটেলে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন। একইসঙ্গে তার সহযোগী চলিশিয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য তুহিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।
আসাদুজ্জামান জনি নওয়াপাড়া বাজার গরুহাটা এলাকার কামরুজ্জামান মজুমদারের ছেলে। জনি নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৪ সালের ২১ নভেম্বর আসাদুজ্জামান তার সাংগঠনিক পদ স্থগিত করা হয়। অপরদিকে সাবেক ইউপি সদস্য তুহিন অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের মাহমুদ শেখের ছেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জনি পলাতক ছিলেন। গত বছরের জুলাই মাসে নওয়াপাড়ার এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী আসমা খাতুন অভিযোগ করেন যে, তার স্বামীকে অপহরণ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করা হয়। চাঁদা না দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এরপর তাকে বালুতে বুক পর্যন্ত পুঁতে রেখে কয়েক দফায় ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এই ঘটনায় আসাদুজ্জামান জনিসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। পরে চলতি বছরের ৩ আগস্ট আসাদুজ্জামান জনিসহ মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়।
অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, ৪ কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে জনিকে খুলনায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুনের অভিযোগে জানা যায়, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী টিপুকে সুকৌশলে নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির পদ স্থগিত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনির অফিসে ডেকে নিয়ে যান সৈকত হোসেন হিরা নামে এক ব্যক্তি। এ সময় জনি ব্যবসায়ীকে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। এরপর সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে জনির নিজ প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট করেন। টাকা পেয়ে ওইদিন ব্যবসায়ী টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে টিপু গ্রামের বাড়ি উপজেলার চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে বাজারে যাচ্ছিলেন। পথে হাসপাতাল গেট পার হলে হিরা তার গতিরোধ করেন এরপর বেলা ৩টা পর্যন্ত তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার জানতে পারে, তাকে জনির ‘কণা ইকো পার্কে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওই সময় বাদী সেখানে গেলে জনি, সম্রাট হোসেন ও নওয়াপাড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজ উদ্দিন আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর, বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালু চাপা দিয়ে আরও ২ কোটি টাকা দাবি করেন। ব্যবসায়ী টিপু বাধ্য হয়ে তার ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। এরপর মফিজ এন্টারপ্রাইজের পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট করেন। ওই সময় মফিজ আরও ১ কোটি টাকার চেক আদায় করে জনির নামে কেনা তিনটি ও দিলিপ সাহার নামে কেনা তিনটি মোট ৬টি ১০০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দেন।