৩৬ বছর ধরে চাকুরীতে বৈষম্যের শিকার পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ১৪ হাজার মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার। প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির পরেও আরইবি সরকারের কথা না শোনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বঞ্চিতদের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে পল্লী বিদ্যুৎ খাতে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ভূক্তভোগী মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জারদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক সংগ্রামকে জানান, প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন পূর্তিতে জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া ভাষণে সকল প্রতিষ্ঠানে অনিয়মিত ও চুক্তিভিত্তিক জনবলকে নিয়মিত করার ঘোষণা দেন। ইতোমধ্যেই সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থায় অনিয়মিত ও চুক্তিভিত্তিক জনবলকে নিয়মিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমনকি অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ে তা কার্যকরও হয়েছে।
আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) সুত্রে জানা যায়, আরইবিতে (পল্লী বিদ্যুতায়ন র্বোর্ড) বিভিন্ন সময়ে সাবেক একজন নির্বাহী পরিচালক (ইডি) ও বর্তমান পরিচালকসহ ৩ শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারিকে নিয়মিত করা হয়েছে। নিয়মিত করা এসব কর্মকর্তা কর্মচারিরা প্রকল্পের জন্য অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে আরইবিতে কর্মরত অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করার প্রক্রিয়া চলছে। অথচ পবিসের ৩৬ বছর যাবৎ চুক্তি ভিত্তিক কর্মরত মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জারদের নিয়মিত করার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
ঢাকা অঞ্চলের একজন মিটার রিডার নাম প্রকাশ না শর্তে জানান, তিনি ২০ বছর ধরে মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার হিসেবে কর্মরত হলেও তাকে নিয়মিত করা হয়নি। শুধু তিনি নন ৩৬ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক কাজ করার পরেও এই পদের জনবল নিয়মিত করা হয়নি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সূচনালগ্ন থেকে ৪৭ বছর ধরেই সাংগঠনিক কাঠামোতে মিটার রিডার কাম-ম্যাসেঞ্জার পদটি রয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ জুলাই বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে সকল চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিত করার ঘোষণা দেন। ১৪ জুলাই চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিত করার জন্য আরইবি ও পবিসের একটি যৌথ কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে থাকা অধিকাংশ কর্মকর্তারাই চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের নিয়মিত করার মতামত দেন। আরইবি গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জারদের নিয়োগ পদ্ধতি ও একই রকম চুক্তির ফরমেটে অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া চুক্তিভিত্তিক লাইনম্যান ও চলতি বছরের ১ জানুয়ারি দৈনিক মজুরিভিত্তিক বিলিং সহকারীগণকে নিয়মিত করে। এর আগে ২০০৯ সালেও ৪০ বছর বয়সে চুক্তি ভিত্তিক বিলিং সহকারীদের নিয়মিত করা হয়েছিল। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অজ্ঞাত কারণে তাদের নিয়মিত করা হচ্ছে না। পল্লী বিদ্যুৎ এর ভৌগিলিক কারনে তাদের পাহাড়, হাওড় ও চর এলাকায় কাজ করতে হয়। এতে তাদের পরিশ্রমও অনেক বেশী হয়। পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ। প্রতি মাসে গ্রাহক বাড়ছে এক থেকে দেড় লাখ। গ্রাহক অনুপাতে সারা দেশে প্রায় ১৮ হাজার মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার থাকার কথা। সেখানে আছে প্রায় ১৪ হাজার। ৪ হাজার জনের বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে তাদের। তারা বলছেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়, অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে শনাক্তকরণ, নাইট ও ডে অপারেশন, মিটার চেকিং, গ্রাহক মোটিভেশান, দাপ্তরিক চিঠি পত্র ও বিজ্ঞপ্তি বিতরণ, অফিস ডিউটি এবং দুর্যোগ মুর্হুতে লাইন সচল করার কাজসহ পল্লী বিদ্যুতের নানা ধরণের কাজ করতে হয় তাদের। অথচ তাদেরই নিয়মিত করা হয়নি।