স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর:

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ক্রয়াদেশ সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং চরম আর্থিক সংকটের কারণে গাজীপুরের মুকুল নীটওয়্যার লিমিটেড কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার থেকে কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে জানানো হয়।

অন্যদিকে, আগাম কোনো নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়ছেন শ্রমিকরা। তারা দ্রুত তাদের বকেয়া বেতন, ভাতা ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।

কারখানার কয়েকজন শ্রমিক বলেন, 'কারখানা চালাতে না পারলে আমাদের কিছু বলার নেই, কিন্তু শ্রম আইন অনুযায়ী আমাদের সকল পাওনা পরিশোধ করতে হবে। আমরা ১৫ তারিখ পর্যন্ত কাজ করেছি। মঙ্গলবার কারখানা বন্ধ ছিল। বুধবার সকালে এসে দেখি স্থায়ীভাবে বন্ধের নোটিশ টানানো। হঠাৎ এভাবে কারখানা বন্ধ হওয়ায় আমরা চরম বিপদে পড়েছি। এখন আমরা কোথায় যাবো—এই দুশ্চিন্তায় আছি।'

কারখানা কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মইনুল ইসলাম মকুল। আবেদনে বলা হয়, বর্তমান আর্থিক বাস্তবতায় কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা আর সম্ভব নয়।

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ সড়কের নীল নগর এলাকায় অবস্থিত মুকুল নীটওয়্যার লিমিটেড কারখানাটি বুধবার সকাল থেকে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। কাজে যোগ দিতে এসে কারখানার প্রধান ফটকে স্থায়ীভাবে বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করে নিয়ন্ত্রণে আনে।

কারখানার পরিচালক মইনুল ইসলাম মকুল তার লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, অর্ডার সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং তীব্র আর্থিক ঘাটতির কারণে কারখানার কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ (সংশোধিত) এর ধারা ২৮(ক) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধি ২০১৫-এর বিধি ৩২ অনুযায়ী ১৭ ডিসেম্বর (বুধবার) থেকে কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শ্রম আইন ও বিধি অনুসারে আলোচনা সাপেক্ষে শ্রমিক-কর্মচারীদের সকল পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ (কোনাবাড়ী জোন)–এর পরিদর্শক, মোর্শেদ জামান জানান, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।