খুলনা ব্যুরো, ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা সংবাদদাতা : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিল হলো বিল ডাকাতিয়া। ফুলতলা -ডুমুরিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস এই বিল। বিল ডাকাতিয়ার অব্যাহত পানিবদ্ধতায় এই অঞ্চলের মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ও দূর্ভোগ আমাকে সবসময় পীড়া দেয়। আমিও এই মাটির সন্তান। এই বিলে আমাদেরও জমিজমা রয়েছে। সুতরাং আপনাদের দুঃখ-কষ্ট আমাদেরই দুঃখ-কষ্ট। আমি গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর জেল থেকে বেরিয়েই বিলের পানিবদ্ধতার কথা জানতে পারি। তখন এলাকার মানুষের কথা বিবেচনায় রেখে আমি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ডিসি, ফুলতলা-ডুমুরিয়ার ইউএনও অফিসে নিজে গিয়ে টেলিফোন করে চেষ্টা করেছি এই পানিবদ্ধতা নিরসনের। কিন্তু এই পানিবদ্ধতা দুই ভাবে হয়ে থাকে। এক. প্রাকৃতিক দুই. মনুষ্য সৃষ্টি। প্রকৃতির উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এটা একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু আমাদের নিজ স্বার্থের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে খালে বিলে পাটা দিয়ে, জমি দখল করে মাছ চাষ করার নামে খাল দখল করে রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবাহিত হতে পারে না সৃষ্টি হয় পানিবদ্ধতা। আমি গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আপনাদের দূর্ভোগের কথা তুলে ধরি। উনি তাৎক্ষণিকভাবে একটি কমিটি করে দেয় এবং পানি উন্নয়ন বোডেৃর ডিজিকে পাঠান পানিবদ্ধতা দূরীকরণের করণীয় ঠিক করতে। গত শুক্রবার ডিজি আসছিলেন এবং তিনটা পর্যায় ঠিক করেছেন। এদিকে যদি এই স্লুইসগেটের সবগুলো খুলে দেয়া হয় তাহলে এক পাশ রক্ষা পেলেও অপর পাশের ভাইয়েরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এমন একটা ব্যবস্থা করতে হবে যাতে উভয় পাশের লোকজন ভালো থাকতে পারে। আজ আমি এই কালিঘাটের পোল্ডার আলোচনা সাপেক্ষে সহনীয় পর্যায় খুলে দিলাম। আর এই বিল ডাকাতিয়া, বিল বাদুড়িয়া, বিল মধুগ্রামসহ সকল বিলের পানিবদ্ধতা নিরসনের এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের কালিঘাট স্লুইসগেটের পোল্ডার খুলে দেয়া পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম, সহকারি সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, ডুমুরিয়া উপজেলার এসিল্যান্ড মো. আতিক, ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, ফুলতলা উপজেলার সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, জামায়াত নেতা শেখ মো. আলাউদ্দিন, মো. আসলাম সরদার, নূর ইসলাম গাজী, মো. মকিত শেখ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে সাবেক এমপি খরশন্ডা কে কে কে বি করমী মাদরাসা ও টিনা ফজলুল উলুম কওমী মাদরাসা পরিদর্শন করেন এবং মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন। এর পূর্বে সকাল ৮টায় ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়ার রানাই মহিলা দাখিল মাদরাসা মাঠে ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। ইউনিয়ন আমীর শেখ আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, ছাত্রশিবিরের সাবেক বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক শিক্ষাবিদ ড. একরাম উদ্দিন সুমন। ইউনিয়ন সেক্রেটারি মাওলানা মুজিবুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, জামায়াত নেতা শেখ আবুল হোসেন, খাঁন ওহিদুল ইসলাম, রানাই দাখিল মাদরাসার সুপার মো. মোস্তফা কামাল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খর্ণিয়া সভাপতি মো. আলী আহমেদ, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির সভাপতি নিত্য রঞ্জন রায়, মো. মুজতবা কামাল, আতাউর রহমান, মতিউর রহমান, মুকুল জোয়ার্দার, মাওলানা আসাদুজ্জামান, মাওলানা আছাবুর রহমান প্রমুখ। সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আগামী নির্বাচনে সৎ, যোগ্য আল্লাহ ভীরু লোকদের যদি নির্বাচিত করেন তাহলে এই অঞ্চলের হিন্দু-মুসলিমসহ সকল মানুষ সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। বিগত ৫৪ বছরে আপনারা বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছেন, মানুষের মধ্যে কোন শান্তি ছিলোনা, দূর্নীতি আর দুঃশাসনের ফলে মানুষ ছিল নির্যাতিত নিষ্পেষিত। তাই আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক দাড়িপাল্লায় ভোট দিতে হবে এবং ঘরে ঘরে দাড়িপাল্লা প্রতীকের গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে।

এদিকে বিকেল সাড়ে ৫টায় খর্ণিয়া ইউনিয়নের টিপনার নতুন রাস্তা বাজারে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অনুরূপ এক ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন। এ সময় তিনি বলেন, এই ফুলতলা ডুমুরিয়ার সন্ত্রাসী জনপদকে জীবনের মায়া উপেক্ষা করে প্রশাসনের সহযোগিতায় সন্ত্রাসমুক্ত করেছিলাম। ডুমুরিয়ার রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদরাসা, মন্দির, শ্মশান, কবরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যতটুকু পেরেছিলাম উন্নয়ন করেছিলাম। বিগত ষোল সতেরো বছরে এই আসনে পূর্ণমন্ত্রীও ছিলেন। উনি কতটা উন্নয়ন করেছেন তা আপনারা জানেন। তবে আমি এইটুকু বলতে পারি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আমি আমার দলের সেক্রেটারি জেনারেল হয় যতটুকু পারছি আমার এলাকার উন্নয়ন করার চেষ্টা করছি। আগামীতে আপনারা যদি আমাকে পুনরায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন তাহলে আমি অতীতের মত এবারও দুর্নীতির উর্দ্ধে থেকে এই অঞ্চলের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবো ইনশাআল্লাহ। ইউনিয়ন আমীর শেখ আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা, ছাত্রশিবিরের সাবেক বিদেশ বিষয়ক সম্পাদক শিক্ষাবিদ ড. একরাম উদ্দিন সুমন। ইউনিয়ন সেক্রেটারি মাওলানা মুজিবুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন, নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ মন্ডল, জামায়াত নেতা শেখ আবুল হোসেন, সহকারি অধ্যাপক মাওলানা আজহারুল ইসলাম, ছাত্রশিবির সভাপতি মো. ছামদান হাসান লিমন প্রমুখ।

এর পূর্বে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ডুমুরিয়ার বন্যাকবলিত শিঙ্গা গ্রাম পরিদর্শন করেন এবং শিঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রামবাসীর সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় তিনি দুটি পূজামন্ডপে আর্থিক সহায়তা প্রদান, পালিয়ে যাওয়া ঠিকাদারের অসমাপ্ত ব্রীজ যা ওই গ্রামের বেরোনের নদীর উপর নির্মিত একমাত্র ব্রীজ দ্রুত সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন।

দুপুর সাড়ে ১২টায় সম্প্রতি ডুমুরিয়ার ঝিলেরডাঙ্গা এলাকায় ট্রাক সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ও আহতদের পরিবারের খোঁজ খবর নেন এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন সেক্রেটারি জেনারেল। এ সময় তিনি নিহতদের কবর জিয়ারত করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, মানুষের কোন ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয় না যদি আল্লাহর ইচ্ছা না হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের নির্দিষ্ট সময় দিয়েই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। ফলে আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এই দূর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে আমরা পারবোনা তবে ভাই হিসেবে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারবো, আপনাদের সুখ-দুঃখের সাথী হতে পারবো। এ সময় তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দূর্ঘটনায় নিহতদের শহিদী মৃত্যুর কামনা করে দোয়া করেন।

রাত সাড়ে ৮টায় ফুলতলা উপজেলার আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে এক উঠান বৈঠক ওয়ার্ড সভাপতি শেখ আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এখানে সেক্রেটারি জেনারেল প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।