দাউদকান্দি (কুমিল্লা) : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির শহীদনগরে গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ করা হয়। কাজ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিএনপি জোট সরকারের সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। উদ্বোধনের পর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে মাস কয়েক পর সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী আ.ন.ম রুহুল হক ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে ৩০ তারিখ ঢাকঢোল পিটিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ট্রমা সেন্টারটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।এরপর থেকে আউটডোরে সীমিত আকারে কখনো স্বাস্থ্য সেবা চললেও পরিপূর্ণ কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি দীর্ঘ ১৮ বছরেও। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, তিন তলা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারটির নিচতলায় জরুরি বিভাগ ও চিকিৎসক-নার্সদের কক্ষেই চলছে সেবা কার্যক্রম।বাকি পুরো ভবনটি ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দোতলা এবং তিন তলায় তৎকালীন সময়ের আধুনিক কাঠামোতে কক্ষগুলো নির্মাণ হলেও এখন খসে পড়ছে পলেস্তারা। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় দরজা-জানালা ভেঙ্গে গেছে আবার কোথাও ধরেছে মরিচা।এদিকে ২০ শয্যা বিশিষ্ট ট্রমা সেন্টারটিতে ১৬টি পদে অর্থো-সার্জারী, এ্যানেসথেসিয়া, আবাসিক মেডিল অফিসার, সিনিয়র স্টাফ নার্স, ফার্মাসিস্টসহ ২৬ জন স্টাফের যায়গায় রয়েছে মাত্র ১৫ জন। তারমধ্যে এখানকার অনেকেই অফিস করছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রী ও জনবল না থাকায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দুর্ঘটনাকবলিতরা। স্থানীয়রা বলছেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে দীর্ঘ ১৮ বছর আলোর মুখ দেখেনি কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেন্টারটি। অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ, সিসিইউ, রোগী থাকার সকল ব্যবস্থাসহ তিনতলা ভবন থাকলেও সবই পরে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। ব্যবহার না থাকায় ট্রমা সেন্টারের অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে, মহাসড়কে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। আশেপাশে উন্নতমানের হাসপাতাল না থাকায় ঢাকা অথবা কুমিল্লায় নিয়ে যেতে হয়। আর এরই মধ্যে রোগীদের চিকিৎসা ঢিলে হওয়ায় অনেকে মৃত্যুবরণ করছেন। শহীদনগরের বাসিন্দা কাউসার আহামেদ বলেন, ট্রমা সেন্টারটির ভিত্তিপ্রস্থর ও উদ্বোধনে আমি উপস্থিত ছিলাম। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। যেন দুর্ঘটনায় আহতরা তাৎক্ষনিক সেবা পায়। চালু না হওয়ার একটাই কারণ ছিলো, তাহলো বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে এটা হওয়াতে লীগের একটা এলার্জি ছিলো এটার প্রতি আর এজন্য কেবল মাত্র প্রতি হিংসার করনে, ১৯টি বছর এই ট্রমা সেন্টারটি চালু হয়নি। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি। যেন দ্রুত এটি চালু করা হয়।দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও জনবল না থাকা ট্রমা সেন্টারটি চালু করা যাচ্ছে না। তবে আমরা একটি তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সরকার পদক্ষেপ দিলে দুর্ঘটনায় আহতরা ঢাকায় না গিয়ে এখানে উন্নত সেবা পাবে।ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসা দিতে স্থাপিত এই বিশেষায়িত হাসপাতালটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। এতে মহাসড়কে দুর্ঘটনায় আহতরা বঞ্চিত হচ্ছেন জরুরি চিকিৎসা সেবা থেকে। দ্রুত পরিপূর্ণ কার্যক্রমে ফিরুক এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
গ্রাম-গঞ্জ-শহর
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দি শহীদনগরের ট্রমা সেন্টারটি ১৮ বছরেও চালু হয়নি
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দির শহীদনগরে গণপূর্ত বিভাগের অর্থায়নে ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে
Printed Edition
