চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) হিসাব বিভাগ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ দুই সপ্তাহ আগে নির্দেশ দিলেও এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি চসিক প্রশাসন।

গত ৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি কর্পোরেশনÑ২ শাখা থেকে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো চিঠিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, হিসাব বিভাগের তিন কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, জাইকা প্রকল্পের আওতায় সোনালী ব্যাংকের সিরাজউদ্দৌলা রোড শাখার একটি হিসাব (নংÑ০১০১৮৩৬০০০১০৩) থেকে চসিক মেয়রের অনুকূলে জামানত জমা দেওয়ার জন্য ইস্যুকৃত চেক ভাউচার পরিবর্তনের মাধ্যমে অন্যত্র জমা করা হয়। এতে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৩ হাজার ৫২৭ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা ও আরও এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে। পাশাপাশি অপরাধ সংঘটনের সময় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এবং চসিকের হিসাব বিভাগের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে দুদক।

তবে মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নির্দেশনার দুই সপ্তাহ পার হলেও চসিক এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিযুক্তরা হলেন—চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির চৌধুরী, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (বিল) আশুতোষ দে এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (বাজেট) মাসুদুল ইসলাম।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দুদকের অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত থাকার পরও গত ২৯ সেপ্টেম্বর হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে চসিক প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেয় প্রশাসন। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে সমালোচনার মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ এবং মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় মেয়রের অনুমোদনে সেই পদোন্নতি বাতিল করা হয়।

এদিকে গত ৫ অক্টোবর আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হলেও এখনও তা প্রকাশ হয়নি। চসিক সচিব (ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) মোহাম্মদ আশরাফুল আমীন দাবি করেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। তবে তদন্ত কর্মকর্তার আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণে তিনি ছুটিতে ছিলেন বলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। চসিক সূত্র বলছে, আইন কর্মকর্তা মাত্র দুইদিন ছুটিতে থাকলেও ইতোমধ্যে আট কর্মদিবস অতিবাহিত হয়েছে। ফলে ‘তদন্ত বিলম্বের’ অজুহাত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষিত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের ছত্রচ্ছায়ায় বিষয়টি ‘ঠান্ডা’ করে রাখার চেষ্টা চলছে। এতে চসিকের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হচ্ছে।