জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুরে বাস্তবায়িত হলো একটি ব্যতিক্রমধর্মী মানবিক উদ্যোগ। জয়দেবপুর জংশন রেলওয়ে স্টেশনে স্থাপিত হলো ‘মুগ্ধ সুপেয় পানির কর্নার’। তরুণদের সৃজনশীল অংশগ্রহণে জেলা পরিষদ আয়োজিত ‘আমার চোখে জুলাই বিপ্লব’ প্রতিপাদ্যভিত্তিক আইডিয়া প্রতিযোগিতা থেকে নির্বাচিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে।

গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা ও গাইডলাইন অনুসরণ করে গাজীপুর জেলা পরিষদ ০১ থেকে ১০ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত ৬৯টি আইডিয়ার মধ্যে বিশ্লেষণ ও মূল্যায়নের ভিত্তিতে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয় ‘মুগ্ধ সুপেয় পানির কর্নার’ স্থাপন প্রস্তাব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনে আগত হাজারো যাত্রী ও পথচারীর জন্য নিরাপদ ও সুপেয় পানির একটি উন্মুক্ত ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। শুধু পানি নয়, এই কর্নারটি হয়ে উঠছে শহীদ মুগ্ধর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ও সমাজে মানবিকতা চর্চার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

৫ আগস্ট ২০২৫ এই সেবামূলক কর্নারের শুভ উদ্বোধন করেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাফিসা আরেফীন। এসময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মোঃ যাবের সাদেক, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকবৃন্দ, প্রকল্প বাস্তবায়নে যুক্ত প্রকৌশলীরা, আইডিয়া প্রস্তাবকারী দলের সদস্যরা, জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার এবং জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

এই উদ্যোগ কেবল একটি পানির কর্নার নির্মাণ নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে মানবিক সেবা, তরুণ চিন্তার বিকাশ ও ঐতিহাসিক চেতনা বোধকে সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার এক প্রতীকী প্রয়াস। ‘মুগ্ধ সুপেয় পানির কর্নার’ এখন গাজীপুরে মানবিকতার নতুন ঠিকানা।

এদিকে জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর আত্মত্যাগ ও চেতনা স্মরণে তারুণ্যের মাঝে সবুজের বার্তা ছড়িয়ে দিতে (৬ আগস্ট ২০২৫) বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সদর দপ্তরে আয়োজিত হয় রোপা আমন ধানের চারা বিতরণ অনুষ্ঠান। তরুণ প্রজন্মকে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত করতে ও জাতীয় উৎপাদনশীলতায় তাদের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিতেই ছিল এ বিশেষ উদ্যোগ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে চারা বিতরণ কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. রফিকুল ইসলাম এবং পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মুন্নুজান খানম।

অনুষ্ঠানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ব্রির কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রিন্সিপাল সাইন্টিফিক অফিসার, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পালন কমিটির আহ্বায়ক ও ফোকাল পয়েন্ট ড. মো. আদিল বাদশাহ। এছাড়া ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখা প্রধান, গবেষক, কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করেন। এ কর্মসূচির মাধ্যমে শুধু স্মৃতিচারণ নয়, বরং খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিভিত্তিক টেকসই উন্নয়নের প্রতিও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।

পিরোজপুর সংবাদদাতা: এমন কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ নেই, যারা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। কোনো ব্যানার ছাড়াই তারা অংশ নিয়েছিল। এমনকি স্কুল-কলেজের ছোট ছোট বাচ্চারা যেভাবে আবাবিল পাখির মতো রাস্তায় নেমে এসেছিল তা ছিল অকল্পনীয়। সবাই যেন মৃত্যুর জন্য সেদিন রাস্তায় নেমেছিল। যারা মরতে চায় তাদের কেউ মারতে পারে না।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে গত ৫ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিবিপ্রবি) আলোচনা সভায় ভিসি ডঃ মোঃ শহিদুল ইসলাম প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী সকল শহীদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা, আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।

বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আকতার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন পিবিপ্রবির সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন, পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল আউয়াল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের চেয়ারম্যান ও ডেইলি অবজারভারের পিরোজপুর প্রতিনিধি জিয়াউল আহসান। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিসংখ্যান বিভাগের রিফাত হোসেন, মনোবিজ্ঞান বিভাগের মীম আক্তার, সিএসই বিভাগের মারুফ হোসেন ও গণিত বিভাগের শাদাব হাসিন বক্তব্য দেন।