গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) সংবাদদাতা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুরসহ আশেপাশের উপজেলাগুলোতে একসময় ছিল কদবেল গাছে ভরপুর। গ্রামের পর গ্রামজুড়ে রাস্তার ধারে, খেতের পাশে, বাড়ির উঠানে, এমনকি বিদ্যালয়ের আঙিনায়ও দেখা মিলত কদবেল গাছের সারি। কদবেলের মিষ্টি গন্ধ আর ঝাঁঝালো টক স্বাদ ছিল গ্রামের মানুষের রোজকার জীবনের অংশ।

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই চেনা দৃশ্য আজ আর দেখা যায় না। আগের সেই কদবেল গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে, নতুন করে তেমন রোপণও করা হয় না। ফলে এখন বাজারে দেশীয় কদবেলের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ কমে গেছে অনেক।

অতীতের কদবেল সমৃদ্ধ অঞ্চল : গোমস্তাপুর, নাচোল, ভোলাহাট, শিবগঞ্জ¬¬¬-এই চারটি উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ছিল কদবেল গাছের প্রাচুর্য। স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ একে “কদমবেল-নামেও ডাকতেন। কৃষকেরা বাড়ির আঙিনায় বা জমির পাশে গাছ লাগাতেন; কোনো যত্ন ছাড়াই গাছগুলো টিকে থাকত বহু বছর।

শীতের শেষে গাছে ফুল ফুটত, গ্রীষ্মের শুরুতে ফল ধরত। পাকা কদবেল থেকে তৈরি হতো আচার, মোরব্বা ও পানীয়। কদবেল ছিল স্থানীয় বাজারের জনপ্রিয় ফলগুলোর একটি। এখন কেন কদবেল হারিয়ে যাচ্ছে :

স্থানীয় প্রবীণরা বলছেন, ফলন কম হওয়া, গাছের দীর্ঘস্থায়িত্ব কমে যাওয়া, এবং আধুনিক ফল চাষে কৃষকের ঝোঁক বৃদ্ধির কারণে কদবেল গাছ ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। অনেকে জমিতে নতুন ফলের জাত-আম, পেয়ারা, ড্রাগন ফল-চাষ শুরু করায় কদবেলের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

পরিবেশবিদদের মতে, কদবেল শুধু একটি ফল নয়, এটি পরিবেশের জন্যও উপকারী। পাখির খাদ্য সরবরাহ করে এবং গ্রামীণ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। কিš‘ গাছ কমে যাওয়ায় পাখি ও ছোট প্রাণীর আবাসস্থলও হুমকিতে পড়েছে।

সংরক্ষণে উদ্যোগ প্রয়োজন : গবেষকদের মতে, কদবেল গাছ পুনরায় লাগানো ও সংরক্ষণ করা এখন সময়ের দাবি। স্কুল, মসজিদ, রাস্তার ধারে ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় কদবেল গাছ রোপণের উদ্যোগ নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আবারও এই ঐতিহ্যবাহী ফলের স্বাদ পেতে পারে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি স্থানীয় জনগণকে উৎসাহ দেয় এবং চারাগাছ সরবরাহ করে, তবে কদবেল চাষ আবারও ফিরে আসতে পারে আগের সেই ঐতিহ্যে।