জুলাই গণঅভুত্থ্যানে নাটোরের চার শহীদকে নিয়ে প্রথম আলোর অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছনে চার শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
আজ সকাল ১১টার দিকে নাটোর শহরের একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে শহীদ মিকদাদ হোসেন খান আকীবের পিতা নাটোর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর নাটোর সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসাইন খান লিখিত বক্তব্য বলেন, জুলাই গণঅভুত্থ্যানে নিহত নাটোরের চার শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে অত্যন্ত বেদনার সাথে আপনাদের জানাচ্ছি যে, জুলাই গণঅভূত্থ্যান বিরোধী একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা আমাদের পরিবারের শহীদদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আপনারা হয়ত দেখেছেন গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫খ্রিঃ সোমবার পত্রিকাটি তাদের প্রথম পৃষ্ঠায় সারাদেশের জুলাই গণঅভূখ্যানে নিহতদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, নাটোরের তৎকালীন এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়িতে আগুনে পুড়ে যে ৫জন শহীদ হয়েছেন তার মধ্যে শাওন খান সিয়াম একজন শহীদ হলেও বাকী চারজন শহীদ নয়। পত্রিকাটি আরো বলার চেষ্টা করেছে যে, পুলিশ বা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারপিট ও গুলিতে নিহত না হলে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হবে না। তিনি আরো বলেন, আপনারা সকলেই জানেন, ২০২৪ এর জুলাই গণঅভুত্থ্যানের সময় শহীদ মিকদাদ হোসেন খান আকিবের পিতা অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান এই আন্দোলনে সহযোগীতার অভিযোগে আটক হয়ে নাটোর জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। অপরদিকে শহীদ শরিফুল ইসলাম মোহনের ছেলে কলেজ ছাত্র ফারহান ফুয়াদ ৪ আগষ্ট নাটোর শহরে আন্দোলনের পক্ষে মিছিল সমাবেশ করার সময় নাটোরের তৎকালীন এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের লোকজন ধরে নিয়ে নির্যাতন করেছিল। শহীদ মেহেদী হাসান রবিন ও একাদশ শ্রেণীর ছাত্র মিকদাদ হোসেন খান আকিবও সেদিন মিছিলে অংশ নিয়েছিল। পরের দিন ৫ তারিখ দুপুরে নাটোরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ হয়েছে। সেখানেও নিহতরা যোগদান করেছিল। পরবর্তীতে নাটোরের তৎকালীন এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের আলোচিত বাড়ি জান্নাতী প্যালেস থেকে ৬আগষ্ট ভোরে কলেজ ছাত্র মিকদাদ হোসেন খান আকিব ও শাওন খান সিয়াম, স্কুল ছাত্র ইয়াসিন আলী ছাড়াও শরিফুল ইসলাম মোহনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে অগ্নিকান্ডের সময় মেহেদী হাসান রবিনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারও মৃত্যু হয়। সকলের মৃত্যুর ঘটনায় নাটোর থানা ও আদালতে সুনিদিষ্ট ভাবে তৎকালীন ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা ও নাটোরের তৎকালীন এমপি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরো পরে বর্তমান সরকার এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন নিহতদের যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠায়। আমরা সকলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন করি। বর্তমান সরকার এবং জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন আমাদের পরিবারের প্রিয় সন্তানদের জুলাই গণঅভুত্থ্যানে নিহত শহীদ হিসেবে তালিকা ভুক্ত করেন।
কিছু দিন থেকে নাটোরের একটি মহল এসব হত্যা মামলার আসামী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাঁচাতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা মনে করি, এসব হত্যা মামলার আসামী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাঁচাতে মামলা গুলোকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একটি মহল পরিকল্পিত ভাবে নাটোরের তৎকালীন এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাড়িতে আগুনে পুড়ে নিহত ৫জন শহীদের চারজনকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমরা এধরনের ঘৃন্য ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা বলতে চাই, জুলাই গণঅভুত্থ্যান এক দিনে হয়নি। আওয়ামী ফ্যাসিবাদীদের ক্ষমতা থেকে হঠাতে জুলাইয়ের শুরু থেকে আগস্টে নতুন সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত সারা দেশে যারা ফ্যাসিবাদীদের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখে জীবন দিয়েছেন তারা সকলেই শহীদ। বর্তমান সরকার ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন সেই স্বীকৃতিও তাদের দিয়েছেন। অথচ ঘটনার এক বছর পর হঠাৎ করেই জুলাই গণঅভূখ্যান বিরোধী হিসেবে পরিচিত এই পত্রিকাটি আগুনে পুড়ে নিহতরা শহীদ নয় বলে নতুন করে ফতুয়া দেয়ার অপচেষ্টা করছে। আমরা তাদের এমন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে ভবিষ্যতে তাদের এমন বির্তক সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার আহবান জানাই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ মেহেদী হাসান রবিনের স্ত্রী, ওয়াহিদা হাসান শহীদ মিকদাদ হোসেন খান আকিবের পিতা অধ্যক্ষ মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান, শহীদ শরিফুল ইসলাম মোহনের ছেলে ফারহান ফুয়াদ, শহীদ ইয়াসিন আলীর পিতা ফজের আলীসহ পরিবারের সদস্যরা।