যশোর সংবাদদাতা : যশোর সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন অন্তত ১০টি সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ ফেলে রেখেছে বছরের পর বছর। এসব সড়কের কাজ কয়েক বছর আগে শুরু হলেও শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। ৪ থেকে ৫ বছর ধরে অধিকাংশ সড়কের কাজ ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ কাজ হয়েছে। দীর্ঘদিন ম্যাকাডামের কাজ করে ফেলে রাখায় খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। সড়কে ফেলে রাখা খোয়ার লাল গুড়া-বালিতে পথচারি বা সড়কের পাশে বসত বাড়ির লোকজন নাস্তানাবুদ হচ্ছে। বৃষ্টি হলে কাদায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। দ্রুত রাস্তার কাজ সম্পন্ন করার দাবি এলাকাবাসীর।
এলজিইডি অফিসের তথ্য মতে, যশোর সদর উপজেলার উপশহর তৈলকূপ বাজার সড়কের কাশিমপুর ভায়া দিঘিরপাড় পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭১ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ পায় ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম। ২০২০ সালের ১৬ জুন ওই কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ৫ বছরে ওই সড়কের কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। সদর উপজেলার হুদার মোড় হতে হাপানিয়া ভায়া ফুলবাড়ি পুলিশ ক্যাম্পের ১ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার সড়ক কার্পেটিং কাজ পায় ঠিকাদার হানিফ ট্রেডিং এন্ড স্টিল হাউজ। সড়কটির কাজ ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪ বছর পরেও সড়কের কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ। শর্শনাদাহ-ভবানিপুর সড়কের এক দশমিক ৭০কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় ঠিকাদার মেসার্স নাহিদ এন্টারপ্রাইজের আব্দুর রউফ। ২০২৪ সালের জুনে রাস্তার কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই সড়কে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে।
মনোহরপুর যোগিপাড়া হতে ওসমানপুন সড়কে ১দশকি ৭০ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় মের্সাস রেনুইন্টার প্রাইজের আনন্দ বিশ্বাস। কাজ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। মেয়াদ শেষে মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ হয়েছে। দেয়াড়া ইউনিয়নের নতুনহাট থেকে দত্তপাড়া সড়কে ২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ৬ আগস্ট। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৫ বছরে মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ হয়েছে।
মালঞ্চী কোল্ড স্টোর হতে আরাবপুর ইউপি সড়কে ১ দশমিক ৭২ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় মোড়ল ইন্টারপ্রাইজের শাহরুল ইসলাম। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ২০ জুলাই। কাজ হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। বসুন্দিয়া ইউপি হতে সেবানন্দপুরের খেয়াঘাট সড়কে ৪ দশমিক ১১৩ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় লিপু ইন্টারপ্রাইজ। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল। মেয়াদ শেষে ৪ বছর পরেও কাজ মাত্র ৬০ শতাংশ কাজ হয়েছে।
কেসমত হৈবতপুরে শূণ্য দশমিক ৮৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের ২০ আগস্ট। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৪ বছর পরেও কাজ মাত্র ৬৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। কেসমত হৈবতপুরে ২ দশকি ১৮ কিলোমিটার রাস্তার কাজ ২০২০ সালের মে মাসে শেষ হওয়ার কথা। প্রায় ৫ বছর পরে ওই সড়কের কাজ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশ। চুড়ামনকাঠি এলাকায় একটি সড়ক ডিসেম্বরের ২০২৪ সালে কার্পেটিং শেষ করার কথা থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র ৬০ শতাংশ।
এসব সড়কের কাজ দীর্ঘদিনেও শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারন মানুষ। এ বিষয়ে ইজিবাইক চালক মহসিন আলী আব্বাস, আব্দুল হক, র্নিমলসহ আরও অনেকে জানান, রাস্তায় ইট দিয়ে ৫-৬ বছর ফেলে রাখছে। বর্তমানে চলার কোন উপায় নেই। যেমন লাল ধুলোবালি তেমন রাস্তা ভেঙে গর্ত হয়ে গেছে। চলাচলের বিভিন্ন সময় গাড়ি উলটে যায়। একটু বৃষ্টি হলেই তো চলার কোন উপায় থাকে না।
সালতা গ্রামের ইসুফ আলী জানান, এই রাস্তা দিয়ে প্রায় ২০-২৫ গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু বর্তমানে এমন অবস্থা যেকোন রোগী নেওয়ার পথে আরো মর্মান্তিক হয়ে পড়বে। রাস্তার ম্যাকাডামের কাজ করে ৫ থেকে ৬ বছর ফেলে রাখায় খানা গর্তের উচু নিচু হয়ে গেছে।
হৈবতপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠিকাদাররা এক থেকে দেড় বছর পর্যন্ত রাস্তা খুঁড়ে রাখে। এরপর খোয়া দেয়। কার্পেটিং দেয়ার তো কোন খোঁজ নেই।
শর্শনাদাহ গ্রামের জামাল হোসেন জানান, শর্শনাদাহ-ভবানীপুরের মধ্যে এ রাস্তাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কয়েক বছর রাস্তাটির মাটি খুঁড়ে ফেলে রাখছে। এ রাস্তা দিয়ে কৃষকের সবজি-ধান মাঠ থেকে উঠাতে খুবই ভোগান্তিপোহাতে হচ্ছে ।
এ বিষয়ে ঠিকাদার আনন্দ বিশ্বাস জানান, রাস্তার কাজ করতে দেরি হয়েছে। আশা করি ঈদের আগেই কাজ শেষ করতে পারব। আরেক ঠিকাদার আব্দুর রউফ জানান, আওয়ামী লীগের আমলে রাস্তার কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছি। চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। এজন্য কাজে দেরি হয়েছে। আশা করছি দ্রæত কাজ শেষ করব।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার এলজিইডি প্রকৌশলী চৌধুরী মোহাম্মদ আসিফ রেজা বলেন, কয়েকটি গ্রামীণ সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ ঠিকাদার ৫০ থেকে ৬৫ শতাংশ করছে। সবই মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও ৩-৫ বছর হয়ে গেছে এ বিষয়টা সত্য। ঠিকাদাররে অবহেলায় কাজ শেষ হয়নি। এ রাস্তার অর্ধেক কাজ করে ফেলে রাখার কারণে জনসাধারণের দুর্ভোগ হচ্ছে। আশা করি খুব দ্রুত বাকি কাজ শেষ করা হবে।
এলজিইডি যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুবুর রহমান জানান, যশোরে অনেকগুলো কার্পেটিংয়ের কাজ ঠিকাদার শেষ না করে ঠিকাদাররা ফেলে রাখছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে তদারকি করার জন্য ফাইল তৈরি করছি। দুই এক দিনের মধ্যে ঠিকাদারদের নিয়ে মিটিং আমাদের সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হবে। ঈদের আগে কাজ শেষ করার কথা। সেখানে সর্বোচ্চ সময় দেয়া হবে ২ মাস। এ সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করলে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হবে।