যশোর সংবাদদাতা : অজ্ঞাত স্থানে থেকে ফেসবুকে গুজব ও সহিংসতা ছড়ানোর উস্কানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন যশোর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং সমর্থকেরা। এতে আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির আশংকা যেমন দেখা দিয়েছে তেমনি প্রশাসনও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে।
২০২৪ এর ৫ আগস্ট পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ৯ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ১২ এ সংক্রান্তে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গণহত্যায় অভিযুক্ত দলটির নেতাকর্মীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকা- নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। কিন্তু যশোরে এ আইন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। যশোরের অন্তত: দুই ডজন বহুল বিতর্কিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অজ্ঞাত স্থানে থেকে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে চলেছেন। তারা সহিংসতা ছড়ানোর উস্কানিমূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের অগ্রভাগে রয়েছেন যশোরের বহুল বিতর্কিত সাবেক ছাত্রলীগ ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হত্যাসহ বহু মামলার আসামী আনোয়ার হোসেন বিপুল, সন্ত্রাসের গডফাদার সাবেক এমপি শাহিন চাকলাদারের এক সময়ের সহযোগী বহিষ্কৃত ইউপি চেয়ারম্যান সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রওশন ইকবাল শাহী, লুৎফুল কবীর বিজু, জুয়েল আহমেদ ঝিনুক, অনুব্রত সাহা মিঠুন।
এ গ্রুপে আরও আছেন ডা. নবনীতা রায়, ইমন দত্ত, শান্তা রাউত, আলী হোসেন, মাযহারুল ইসলাম, কাজল হাসান, মুহম্মদ মিরাজ হুসাইন, শুভাশীষ চক্রবর্তী, অমিত বিশ্বাস, প্রণব বোস, মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, খুরশিদ এ বাবলু, প্রদীপ কুমার নাথ বাবলু, প্রীতম দেবনাথ ডাবলু, রাজিব আহমেদ, রুহি সাহাদ, তারিকুল ইসলাম। বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা সবাই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থক।
তারা প্রতিনিয়িত যশোরের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন। তাছাড়া ‘হঠাও ইউনূস বাঁচাও দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ ‘দাবায়া রাখতে পারবা না’ এ জাতীয় সহিংসতা ছড়ানোর উস্কানিমূলক পোস্ট দিচ্ছেন। কেউ কেউ দলের শীর্ষ নেতাদের গুণগান করছেন। এসব পোস্টের কমেন্ট বক্সে তাদের সমর্থকরা সরকারবিরোধী নানা তির্যক মন্তব্য এবং আওয়ামী লীগের প্রচারে ব্যস্ত থাকছেন। সূত্রমতে, উস্কানিদাতারা বেশির ভাগ যশোরের বাইরে থেকে এসব চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ যশোরেই অবস্থান করছেন বলেও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তাদের এসব গুজব, উস্কানিমূলক প্রচারণায় আইন শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনি প্রশাসনও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে।
এ বিষয়ে যশোর ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া জানিয়েছেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সাইবার ক্রাইম টিম ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা হয়েছে এবং আরও তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে সেগুলো বন্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।