পাথরঘাটা (বরগুনা) সংবাদদাতা : বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ৫ টি ট্রলারে গণডাকাতির খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অর্ধশত জেলে আহত ও পাঁচজন গুলীবিদ্ধ হয়েছেন। ডাকাত দল তাদের মাছ ও রসদসহ ২ কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ডাকাতেরা ট্রলারগুলোর ইঞ্জিন বিকল করে দেওয়ায় জেলেরা ঘটনার ২৫ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার রাতে কূলে ফিরে এসেছে।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের বড় বাইজদা এলাকায় এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ট্রলারে থাকা মাছসহ রসদসামগ্রী লুট করে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। তবে জলদস্যু বাহিনীর নাম জানা যায়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান। ডাকাতির কবলে পড়া জেলেদের সবার বাড়ি পাথরঘাটায়। ডাকাতি হওয়া ট্রলারগুলো হলো এফবি তারেক-২, এফবি তুফান-২, এফবি মা, এফবি আব্দুল্লাহ, এফবি জুনায়েদ। সব ট্রলার গুলো পাথরঘাটার মালিকাধীন।
এর মধ্যে এফবি আব্দুল্লাহ ট্রলারের মাঝি রফিক গাজী বলেন, ‘বুধবার বিকেলে বঙ্গোপসাগরে জাল পেতে মাছ ধরার জন্য অপেক্ষা করি। এর কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সশস্ত্র হামলা চালায় জলদস্যু বাহিনী। এ সময় আমরা বাধা দিলে ট্রলারে উঠে বেদম মারধর করে মাছসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ইঞ্জিন বিকল করে দেয়। তারা ডাকাতি করে চলে যাওয়ার সময় আমাদের জেলেরা ডাকাত ডাকাত বলে ডাক চিৎকার করলে দূর থেকে গুলী ছোড়ে। এতে ট্রলারের অন্তত ৫ জন জেলে গুলীবিদ্ধ হন। এফবি জুনায়েদ ট্রলারে বাবুর্চি মিলন বয়াতি জানান, কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের ট্রলারে উঠে আমাকে মারধর করে। এসময় মাঝিকে দেখিয়ে দিতে বলে। আমাদের জেলেরা মাঝিকে দেখিয়ে না দেয়ায় বেদম মারধর করে সব মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এসময় ডাকাতদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। তারা প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন ছিল বলেও জানান মিলন বয়াতি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ‘সশস্ত্র ডাকাতেরা মালামাল লুট করে ট্রলারের ইঞ্জিন বিকল করে দিয়েছে। এ ছাড়া ওয়্যারলেস নিয়ে গেছে। ডাকাতির শিকার জেলেরা ভ্যাসেল জাহাজের মাধ্যমে উপকূলে সংবাদ পাঠিয়েছে। ঘটনা শোনার পর তাৎক্ষণিক আমরা পুলিশ সুপার এবং কোস্ট গার্ডকে জানিয়েছি। এছাড়াও মালিক সমিতির দুটি ট্রলার পাঠিয়ে জেলেদের উদ্ধার করি। বরগুনার পুলিশ সুপার মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘ট্রলার মালিকদের পক্ষ থেকে আমরা ডাকাতির খবর জানতে পেরে আমরা প্রসাশনিকভাবে কাজ শুরু করেছি। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান খান বলেন, মালিক সমিতির মাধ্যমে বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গোপসাগরে ডাকাতির খবর জানতে পারি। এরপর থেকেই কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও ট্রলার মালিক সমিতির সহযোগিতায় আমরা জেলেদের উদ্ধার করে রাতে ৬৮ জেলেকে পাথরঘাটা ঘাটে নিয়ে আসি। সেখান থেকে আহত জেলেদেরকে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে চিকিৎসা করাই। এর মধ্যে পাঁচজন জেলে গুলীবিদ্ধ রয়েছে। পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা মাহবুব হোসেন জানান, আহত জেলেদের মধ্যে তিনজন অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা ঝুঁকিমুক্ত।