পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে চলতি ২০২৫-২৬ খরিপ-১ মওসুমে পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল। ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে চলতি বছরে (দেশি, তোষা ও মেস্তা জাতের পাট) খুলনা জেলায় ১ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৫৯৯ মেট্রিক টন, বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন, সাতক্ষীরা জেলায় ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ২৯৭ মেট্রিক টন ও নড়াইল জেলায় ২৩ হাজার ৯০০ হক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুসারে খুলনাঞ্চলের এ ৪ জেলায় পাট উৎপাদনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ৯৬ হাজার ২০ মেট্রিক টন।

পাট বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল, যা ‘সোনালী আঁশ’ নামে খ্যাত। বাংলাদেশের জলাবায়ূ ও মাটি পাট চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রথম সপ্তাহ হতে পাটের বপণ, যথা সময়ে পরিচর্যা, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, আগাছা দমনসহ গাছের উ”চতা বৃদ্ধির জন্য পাতলা করণ, পোকার আক্রমন হলে যার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার্বিক কার্যক্রম শেষে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে পাটের কর্তন শুরু হয়েছে খুলনাঞ্চল জুড়ে। খুলনাঞ্চলের পাট চাষীরা এখন তাদের ক্ষেতের উৎপাদিত পাট কর্তন শেষে পাট জাঁগে রাখা, রোদে শুকানো এবং বাজারজাতকরণের প্র¯‘তি নিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর পাট চাষের জন্য খুলনাঞ্চলে অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করেছে। বিগত বছরে কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে পাটের পরিচর্যা ও জাঁগ দেওয়া লাগলেও, চলতি বছরে খুলনাঞ্চলে পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ার দরুন কোনো কৃত্রিম সেচের প্রয়োজন হয়নি, খরচ কম হওয়ার দরুন কৃষকেরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি খুলনাঞ্চলে পাট উৎপাদনের গৃহিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই অঞ্চল সক্ষম হলে একদিকে যেমন পাট উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়বে, অন্যদিকে দেশের অর্থনীতিতে সেটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সর্বশেষ তথ্যনুসারে পাটের অর্জিত আবাদ ও উৎপাদনের হিসাবনুসারে খুলনা জেলায় ১ হাজার ২৫৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৯৩ মেট্রিক টন, বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৯০৬ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন, সাতক্ষীরা জেলায় ১১ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ২১ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন ও নড়াইল জেলায় ২৩ হাজার ৪৯৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৫৭ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন, ৪ জেলায় সর্বমোট উৎপাদন ৭৯ হাজার ৮১৫.৭ মেট্রিক টন পাট। এছাড়া অর্জিত পাটের আবাদে ৩৭ হাজার ৬০৭ হেক্টর জমির পাট ইতোমধ্যে কর্তন করা হয়েছে, যার হার ৯৮.৩%।

দিঘলিয়া উপজেলার গাজিরহাট ইউনিয়নের কৃষক শাহবুদ্দিন জানান, এ বছর ৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ সম্পন্ন করেছি। পাটের বপণ শেষে এখন সঠিক পরিচর্চা, সার ও কীটনাশক প্রয়োগসহ নিবিড় পরিচর্চা অব্যহত রেখেছি। বৃষ্টির পানির বিকল্প হিসাবে সেচের ক্ষেতে পানি দিয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস হতে সার্বিক বিষয়ে সহয়তা করে থাকেন। কালিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম জানান, আমার সালামাবাদ ইউনিয়নে ধুসহাটি, বিল বাউচ, বলাডাঙ্গা ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে ১৫০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিলে মাঝামাঝি পাটের চাষাবাদ শুরু এবং ইতোমধ্যে ওই আবাদকৃত পাটের কর্তন শতভাগ শেষ হয়েছে। কৃষকেরা এখন পাট কর্তন শেষে পাট জাঁগে রেখেছে এবং রোদে শুকাচ্ছে পাশাপাশি বাজারজাতকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ বছর পরিমিত বৃষ্টিপাত হওয়ার দরুন কৃষকদের কৃত্রিম সেচ ব্যবহার করা লাগেনি। এ কারণে খরচ কম হওয়ার দরুন কৃষকেরা লাভবান হয়েছে এবং বাজারজাত করণে ভালো মূল্য পাচ্ছে।