চট্টগ্রাম নগরবাসী বর্তমানে জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে-এমনটাই সতর্কবার্তা দিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় উঠে এসেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অন্তত পাঁচটি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো এলাকায় বাড়িভিত্তিক এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বা ব্রেটিও ইনডেক্স (ইও) ২০-এর বেশি হলে সে এলাকা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। অথচ চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় এই সূচক পেরিয়ে গেছে ১৩৪ পর্যন্ত। ১২ থেকে ১৮ জুলাই পর্যন্ত আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ জরিপে করপোরেশনের ৯, ১৩, ১৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে লার্ভা সংগ্রহ এবং রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, চট্টেশ্বরী সড়ক, ওআর নিজাম রোড, পাহাড়তলী, হালিশহর ও ঝাউতলা এলাকার ১২৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে ৬২টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এসব বাড়িতে ব্রেটিও ইনডেক্স ছিল ৭৫, হাউস ইনডেক্স ৪৩ এবং কনটেইনার ইনডেক্স ৫১। ওয়ার্ডভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়- আগ্রাবাদ ১৩৪.৬২,পাহাড়তলী ১১০,হালিশহর ৬৬.৬৭,চট্টেশ্বরী ৪৮.৩৯,ওআর নিজাম সড়ক ৪২.৮৬, ঝাউতলা ৩৩.৩৩। এছাড়া লার্ভার নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬৫ শতাংশই ছিল এডিস এজিপ্টি প্রজাতির, যা জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রধান বাহক। বাকি ৩২.৬৪ শতাংশ ছিল এডিস এলবোপিকটাস এবং ২.৮৬ শতাংশ উভয় প্রজাতির। জরিপ চলাকালে গবেষকরা তিনজন জিকা ও তিনজন চিকুনগুনিয়া রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেন এবং তিনটি জিকা সংক্রমণ নিশ্চিত করেন। উল্লেখ্য, জুলাই মাসেই চট্টগ্রামে দুইজন জিকা রোগী শনাক্তের পর আইইডিসিআরের একটি দল জরিপে মাঠে নামে।
গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক কিউরেটর ডা. ওমর কাইয়ুম বলেন, “এই মশা তিনটি রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখে। এলাকা ভিত্তিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ করে এখনই প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।” গবেষণা শেষে আইইডিসিআর একটি চার পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরি করে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে পাঠিয়েছে। এতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দেওয়া হয়-আক্রান্ত রোগীদের লক্ষণ বিবেচনায় চিকিৎসা নিশ্চিত করা, জরিপ অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে অবিলম্বে মশক নিধন কার্যক্রম শুরু করা এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করে সমন্বিতভাবে মশক নিয়ন্ত্রণ অভিযান পরিচালনা করা। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবেদনের কথা স্বীকার করে বলেন, “আইইডিসিআরের সুপারিশ অনুযায়ী আমরা জিকা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।” গবেষক দলের মতে, শুধু পাঁচটি ওয়ার্ড নয়, পুরো নগরেই একই ধরনের চিত্র থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নগরজুড়ে মশক নিয়ন্ত্রণে জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।