পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরে আর মাত্র ক’দিন বাকি । আসন্ন কুরবানির জন্য খুলনা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক তথ্য অনুযায়ী খুলনায় ১০ হাজার ৭শ’ খামারী সংখ্যা রয়েছে। সেই হিসাবে ২ লাখ ৩২ হাজার মত বিভিন্ন গবাদি পশু প্রস্তুত আছে। যার মধ্যে ষাঁড় ৪২ হাজার ৩৯৩টি, বলদ বারো হাজার ৪০টি, গাভী রয়েছে ১৪ হাজার ৫০০। সব মিলিয়ে ষাড়, বলদ, গাভী মিলিয়ে মোট গরুর সংখ্যা প্রায় ৭৯ হাজার। পাশাপাশি মহিষ রয়েছে ২৪৬টি, ছাগল ৭৯ হাজার ৫৮৩ টি, ভেড়াসহ অন্যান্য পশু ১৪ হাজার ২৬৮টি। কুরবানিযোগ্য পশু যত্ন-সহকারে লালন পালন ও ভাল দাম পাওয়ার আশায় ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। মোট কথা চাহিদার তুলনায় এ বছর প্রায় ১ হাজার ১০০টির মত পশু বেশি পশু প্রস্তুত আছে। তবে খামারিরা বলছেন, পশুর খাদ্য ও লালন পালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ বছর পশুর দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। এছাড়া ইতোমধ্যে খোলা বাজারে গরুর গোশত ৭৫০ টাকা কেজি দরে ও খাসির গোশত ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মোকামপুর এলাকায় শিকদার হোসেন’র এলাকায় খামারিতে কুরবানিযোগ্য ৫টি পুষ্ঠবান গরু পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, সব সময়ে পরিস্কার পচ্ছিন্নতার মধ্যে পশু পালন করি। এখন বাজার দর হিসেবে একটি গরুর জন্য প্রায় ২০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মত খাবার প্রয়োজন। গেল কয়েক মাস যাবৎ এসব গরুদের পেট পুরে বিভিন্ন খাবার দেয়া হচ্ছে। সয়াবিন খৈল, ভুট্রা, গমের, ভুষি, ডালের গুড়া, ঘাষসহ অনেক ধরনের খাবার দিতে হয়। এছাড়া এখন গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে খরচসহ সামন্য কিছু লাভ হলে পশু গুলো ছেড়ে দিব। এর আগে বাড়ি থেকে ব্যাপারীরা এসে গরু ক্রয় করে নিয়ে যায়। এসব ব্যাপারিরা ঈদ সামনে রেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু ক্রয় করে। এর মধ্যে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে গরুর ক্রয় করতে ব্যাপারিরা খামারে এসে গরু অনুযায়ী যোগ্যদাম দেয়না। যে কারণে এ বছর আমি নিজেই গরু হাটে নিয়ে বিক্রি করতে চাই। আশাবাদি যে ভাল দামে বিক্রি হবে। ইতোমধ্যে গরুর হাটগুলোতে বিক্রি শুরু হয়েছে। এছাড়া দেখা যায় নগরীর গোয়ালখালী এলাকায় ছাগল বিক্রেতা আলী হোসেন তার বাড়ীতে বেশ কয়েকটা খাসি ছাগল ক্রয় করে এনেছে। এখন তার খামারে প্রায় দশ থেকে ২০টির মত ছাগল আছে। তবে এসব খাসির দাম বেশ চড়া কুরবানিতে গোশতের হিসাব না করলেও প্রতি কেজি খাসির গোশত পড়ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা প্রতি কেজি।

এ ব্যাপারে খুলনা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরে খুলনা বিভাগীয় পরিচাল ড. নুরুল্লাহ মো. আহসান বলেন, চাহিদার তুলনা আমাদের খুলনা জেলায় বেশি পশু আছে। এছাড়া এসব পশু সবই কুরবানী যোগ্য । আমরা নিয়মিত বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে গবাদি পশু গোশতের উৎপাদন বিভিন্ন খামারগুলোতে নিয়মিত তদারকি করেছি। পাশাপাশি আমরা খামারীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এ বছর চাহিদার তুলনায় বেশি কুরবানীর পশু প্রস্তুত আছে।

জোড়াগেট কুরবানীর পশুরহাটের উদ্বোধন : খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পরিচালনায় নগরীর জোড়াগেট বাজার চত্বরে কুরবানির পশুর হাট-উদ্বোধন করা হয়েছে। কেসিসি প্রশাসক মো. ফিরোজ সরকার রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায় জোড়াগেট বাজার চত্বরে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুরবানির পশুর হাটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে কেসিসি কর্তৃক প্রতিবছর এ পশুর হাটের আয়োজন করা হয়। সপ্তাহ ব্যাপী পরিচালিত খুলনার সর্ববৃহৎ পশুরহাট পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে সাজানো হয়েছে বড় দু’টি গেট। পুরো হাটটি সাজানো হয়েছে নানা পসরায়।

এস্টেট অফিসার গাজী সালাহ উদ্দীন বলেন, এবারই প্রথম জোড়াগেট কুরবানী পশুরহাটে ৪% করে হাসিল রাখা হবে। এই নিয়ম এবারই প্রথম চালু করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ৫% করে হাসিল রাখা হতো। এছাড়া বিগত বছরে জোড়াগেট কুরবানি পশুরহাটটি কেসিসি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতো। সংশ্লিস্ট বিভাগের সহযোগিতা চাওয়া হতো। এবারই প্রথম কেসিসির একার নিয়ন্ত্রণে হাট থাকছে না। খুলনার ওয়াসা, কেএমপি, জেলা পুলিশ, র‌্যাব, ওজোপাডিকোসহ সরকারি সকল সংস্থাকে এ হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য করা হয়েছে। সুতরাং তাদের দায়বদ্ধতা থেকে এবার তারা হাট পরিচালনা করবেন। তাতে করে ইতিবাচক কার্যক্রম বেশী হবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, এ হাট খুলনার মধ্যে সর্ববৃহৎ পশুরহাট। যা চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত। হাটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকবে। রাতে থাকবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। থাকবে মানুষ ও পশু চিকিৎসার ব্যবস্থা। থাকবে জাল টাকা সনাক্তকরণের ব্যবস্থা।

এবার প্রশাসক সাদামাঠা ভাবে হাট উদ্বোধন করা হয়েছে।