গণহত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছিলো পুরো জাতি। গণহত্যা তথা মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণার দিন ১৭ নভেম্বর সোমবার। রায় শোনার জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের দৃষ্টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে। গণহত্যার দায়ে সরকারের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় হবে এক ঐতিহাসিক রায়। শেখ হাসিনা ছাড়াও এ মামলার অপর দু’আসামী হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পালিয়ে বর্তমানে ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হয়েছেন। তিনি জবাবন্দি দিয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ স্বীকার করেছেন।

রায়ে শেখ হাসিনা ও আসদুজ্জামান খান কামালের হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। আর রাজসাক্ষী আইজিপির হয়েছে ৫ বছরের কারাদণ্ড। মানুষকে তার কর্মফল ভোগ করতে হয়। দুনিয়ার আদালতে অপরাধীর সাজা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি, তবে পরকালের সাজা আমাদের জানার বাইরের বিষয়। তবে পরকালের বিচার হবে যথাযথ, সেখানে অর্থ ও চাতুর্যের মাধ্যমে পার পাওয়া যাবে না। পরকালীন বিচারের কাঠিন্য সম্পর্কে ধারণা থাকলে মানুষ কোনো অপরাধ করার আগে দশবার ভাবতো। প্রশ্ন হলো, আমরা পরকালকে কতটা বিশ্বাস করি? বিশ্বাস করলে মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর মতো উচ্চমাপের মানুষরা খুন-গুম ও দুর্নীতির মতো মহাপাপের সাথে কিভাবে যুক্ত হয়ে যান? শুধু যুক্ত নয়, এসব ঘৃণ্য কাজে তো তারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন তাদের সাজা ভোগ করার পালা। উল্লেখ্য, সাজাপ্রাপ্ত সবাই মুসলিম। বর্তমান সভ্যতায় তো মুসলিম নামধারী হওয়ার পরও আমরা সেক্যুলার হয়ে যাই। নামাজ, রোজা ও হজ্জ পালন করার পরও জীবন-যাপনে আমরা হয়ে পড়ি ইহলৌকিকবাদী তথা সেক্যুলার। দুনিয়াটাই আমাদের কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। দুনিয়ার স্বার্থে অন্যায়-অবিচার, গুম-খুন, দুর্নীতি করতে আমরা পিছপা হই না। যার বড় উদাহরণ শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল। জাতির জন্য এটা মহাপরিতাপের বিষয়।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা গং শুধু গণহত্যা করেনি, জাতিকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভারতের কাছে মাথা নত করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ওদের লক্ষ্য ছিল শুধু ক্ষমতার মসনদ। এ অন্যায় কাজে ভারত সমর্থন জুগিয়েছে। বিনিময়ে আদায় করে নিয়েছে নানা স্বার্থ। হাসিনা গং ক্ষমতা ও দুর্নীতির স্বার্থে দেশে বিভাজনের রাজনীতি চালু রেখেছে। কথায় কথায় তারা স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির ধুয়া তুলতো। অথচ বাস্তবে শেখ হাসিনা ও তার দলবলরাই ছিল স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। ভারতের প্রতি তাদের সেবাদাস মনোবৃত্তিই এর বড় প্রমাণ। ভারত এর সুযোগ নিয়েছে। হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বার্থের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে মোদি সরকার। ভারতের মাটিতে অবস্থান করে বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে খুনি শেখ হাসিনা। সোমবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে।

এই রায় কার্যকর করতে হলে হাসিনাকে দেশে আনা প্রয়োজন। মোদি সরকার কি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর মতো যৌক্তিক কাজটি সম্পন্ন করতে এগিয়ে আসবে? হাসিনার গণহত্যায় কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, মায়ের সহস্র সন্তান আহত অবস্থায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। মায়েরা তো হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর দেখতে চায়। এ পথে এখন বাধা হয়ে আছে ভারত সরকার। এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে অর্থবহ ভূমিকা রাখাতে পারে ভারতের জনগণ। আমরা দু’দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বে বিশ্বাসী। ভারতের জনগণ কেমন সাড়া দেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।