জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে একজনকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের সাবেক এক নির্বাচন কর্মকর্তাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক অংটি চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
অভিযুক্তরা হলেন-চট্টগ্রাম বন্দর থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের সাবেক জন্মনিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমার দে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া আবদুল জলিল। বর্তমানে আশরাফুল আলম ফেনী জেলার অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।
দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমেদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ৫০ বছর বয়সী আবদুল জলিলের বর্তমান ঠিকানা কক্সবাজার পৌরসভার তারাবনিয়া ছড়া মসজিদ কলোনি এবং স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ হালিশহর অলি মাঝিরপাড়া।
দুদকের তদন্তে জানা গেছে, আবদুল জলিল ২০১১ সালের ২২ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রামের শুলকবহর ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন করেন। পরে ২০১৭ সালের ১৪ মে তিনি আবারও একই ওয়ার্ডে নতুন করে জন্মনিবন্ধন নেন। দ্বিতীয় জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতেই তিনি চট্টগ্রাম বন্দর থানার নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন।
তদন্তে উঠে আসে, জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদনে তিনি স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার নাম ব্যবহার করেন। কিন্তু জমা দেওয়া জন্মনিবন্ধনে তার স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয় কক্সবাজারের চৌফলদ-ী এলাকায়। এ ছাড়া বর্তমান ঠিকানা হিসেবে শুলকবহরের আবদুল লতিফ রোড উল্লেখ করা হয়।
দুদক বলছে, এসব ঠিকানায় জলিল বা তার পরিবারের সদস্যদের বসবাসের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আবেদন ফরমের ৪৬টি ঘরের মধ্যে বহু জায়গায় তথ্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। এমনকি মোবাইল নম্বর, ধর্ম, ভোটার তালিকায় বাদ পড়ার কারণ, শনাক্তকারী ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ ঘরগুলোও ফাঁকা ছিল।
এছাড়া এনআইডি নিবন্ধনের সময় তিনি জমির দলিল, জাতীয়তা সনদ, শিক্ষা সনদ, বিদ্যুৎ বিল কিংবা প্রত্যয়নপত্র কিছুই জমা দেননি। শুধুমাত্র একটি জন্মনিবন্ধনের কপি দিয়েই তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, তার জমা দেওয়া জন্মনিবন্ধনের যাচাইকারী ও নিবন্ধকের স্বাক্ষর জাল।
দুদকের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, আবদুল জলিলের পরিবার বা পূর্বপুরুষদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের কোনো বৈধ প্রমাণ নেই। তার কোনো জাতীয়তা সনদ বা ভূমির রেকর্ডপত্রও নেই। তিনি দাবি করেছেন, তার বাবা-মা ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মারা গেছেন, কিন্তু তাদের মৃত্যুসনদও দেখাতে পারেননি।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১১ সালে বৈধ কোনো কাগজ ছাড়াই জলিল জন্মনিবন্ধন নেন শুলকবহরের তৎকালীন জন্মনিবন্ধন সহকারী পিন্টু কুমার দের সহযোগিতায়। পরে ২০১৭ সালে একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জন্মনিবন্ধন সহকারীর স্বাক্ষর জাল করে আবারও নতুন জন্মনিবন্ধন করেন।
এরপর বন্দর থানার তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফুল আলম অফিসের ল্যাপটপ ব্যবহার করে কোনো রেকর্ডপত্র ছাড়াই জাল জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতে তার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেন।
এই ঘটনায় দ-বিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারায় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ সালের ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।