ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশে অন্যায়ভাবে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। এটা একটা বড় ধরনের অপরাধ। এটার সমাধান হওয়া উচিত। কেউ কেউ বলছে, এখানে একটা মানবিক করিডোর হলে তাদের একটু সহযোগিতা হবে। আমরা ইতিহাস থেকে দেখতে পাই, অনেক লোক এই করিডোরের কথা বলে, মানবিক সহযোগিতার কথা বলে তারা উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। বণিকের বেশে এসে তারা শাসক বনে যায়। বৃটিশরা এসেছিল ব্যবসা করতে, তারপর তারা রাজদন্ড হাতে নিয়ে নিল। বহু জায়গায় এমনটা ঘটেছে। মানুষের উপকার করার জন্য আমরা যে কোন কর্মসূচী গ্রহণ করতে রাজি আছি। কিন্তু এসব বিষয় একটু স্পর্শকাতর। সুতরাং আমাদের ওপর দিয়ে অন্য কাউকে চলতে দিয়ে সাহায্যের জন্য করিডোরের নামে আমাদের ধ্বংসের হাতে তুলে দিয়ে আত্মহত্যা মূলক এ কর্মসূচী আমরা কখনোই বরদাস্ত করব না। শনিবার (১৭ মে) ঠাকুরগাঁও শহরের একটি মিলনায়তনে জেলা জামায়াত আয়োজিত সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরো বলেন, করিডোর করতে হলে আমাদের সবাইকে নিয়ে বসে আলোচনা করেই এটা করতে হবে। বিনা আলোচনায় এটাকে ছেড়ে দেয়া যাবে না। আমাদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একটু নরম সুরে কথা বলছিলেন, পরে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, না এটা এভাবে হবে না, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। আমরা পরিষ্কার বলবো করিডোর যদি করতে হয়, বাংলাদেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, যত শ্রেণি পেশার লোক আছে, সকল লোকদের সাথে নিয়ে আলোচনা করার পরেই কেবল করিডোর দেয়ার চিন্তা করা যেতে পারে। তার আগে করিডোর দেয়ার কোন চিন্তা করা যাবে না।

বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ভারত কর্তৃক পুশইনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে সাবেক এই এমপি বলেন, এই কাজটা দ্রুত বন্ধ হওয়া উচিত। বাংলাদেশে পুশইনের ঘটনা যাতে আর একটাও না ঘটে। এটা যদি ঘটে আমরা বলবো আন্তর্জাতিক অপরাধে তাদের (ভারত) বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা দরকার আছে।

নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা বাংলাদেশে নির্বাচন চাই, সেই নির্বাচন হবে সংস্কার করার পরে। বাংলাদেশে নির্বাচনের যে ট্রেডিশন হয়েছে সেটা নির্বাচন না ভোট ডাকাতি। এটা চলবে না, আগে সংস্কার তারপর নির্বাচন। যারা অপরাধী তাদের নির্বাচন করতে দেয়া যাবে না। আগে তাদের বিচার হবে পরে নির্বাচন। বিচারে তারা নিরপরাধ হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, অপরাধী হলে শাস্তি তাদের পেতেই হবে। আমরা সংস্কার এবং বিচার ছাড়া নির্বাচন না হওয়ার পক্ষে। ক্ষমতা বেশ স্বাদের জিনিস। অতীতে এমনটা হয়েছে; ক্ষমতায় গেলে যারা একবার স্বাদ পায়, অনেকে এই স্বাদটা ছাড়তে চায় না। ক্ষমতায় থেকেই কিভাবে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা যায় সে চেষ্টা করে। এ জন্য কেউ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। কেউ দল গঠন করে। এটা করতে দেয়া যাবে না। যদি কেউ নির্বাচন করতে চায় তাহলে ঐ জায়গা ছেড়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে এসে তারা দল গঠন করতে পারবে, নির্বাচন করতে পারবে, সবই করতে পারবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান এর সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল পরিচালক মাওলানা আব্দুল হালিম, টিম সদস্য আব্দুর রশিদ। সহকারি জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলমগীর, মাও. ফজলে রাব্বী মোর্তজাবী প্রমুখ।

গুলশান জোনে জামায়াতের সদস্য (রুকন) শিক্ষাশিবির : অধিকারহারা মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং সুখী-সমৃদ্ধ নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ময়দানে অকূতোভয় সৈনিকের ভূমিকা পালনের আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।

গত শুক্রবার রাত ৮টায় রাজধানীর একটি মিলনায়তনে গুলশান জোন জামায়াত আয়োজিত এক সদস্য শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, ঢাকা মহনগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি ও জোন পরিচালক ইয়াছিন আরাফাতের সভাপতিত্বে এবং সহকারী পরিচালক,মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য হেদায়েতুল্লাহর পরিচালনায় শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, ঢাকা-১৭ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী ডা. স ম খালিদুজ্জামান, ঢাকা-১১ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন বনানী থানা আমীর মিজানুর রহমান খান, গুলশান পশ্চিম আমীর মাহমুদুর রহমান আজাদ, ক্যান্টনমেন্ট থানা আমীর আব্দুস সাকি ও গুলশান পূর্ব থানা আমীর জিল্লুর রহমান প্রমূখ।

অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে অত্যাচারী আওয়ামী- বাকশালীদের পতন হলেও রাষ্ট্রাচারে এখনো শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। কারণ, বাকশালীরা রাষ্ট্রের সকল অবকাঠামোকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচারবিভাগ ও জনপ্রশাসন সহ রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলদাস প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। সঙ্গত কারণেই বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে কোনভাবেই অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আগামী নির্বাচনের আগেই রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। তিনি সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহবান জানান।

তিনি বলেন, রুকনিয়াত কোন পদ-পদবী নয় বরং একটি মানের নাম। তাই প্রত্যেক রুকনের জীবনে সে মানের প্রতিফলন থাকা অত্যাবশ্যক। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ফরজ- ওয়াজিব মেনে চলে হারাম উপার্জন থেকে সব সময় বেঁচে থাকাও জরুরি। সর্বোপরি কোন ক্ষেত্রেই মিথ্যা ও অসততার আশ্রয় নেওয়ার সুুযোগ নেই। রূঢ়তা নয় বরং চরিত্র মাধুর্য্য দিয়েই সবকিছু জয় করতে হবে। আর ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে রুকন সহ সর্বস্তরের জনশক্তিকে গণসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। তিনি দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানের আহবান জানান। তাহলেই দ্বীনের বিজয় সহজ হতে সহজতর হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ স্বৈরাচার ও ফ্যাসীবাদ মুক্ত হলেও আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এখনো শেষ হয়ে যায়নি বরং অর্জিত বিজয় টেকসই ও অর্থবহ করতে আমাদেরকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। তিনি দেশ ও জাতিস্বত্ত্বাবিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।