নুরুল আমিন মিন্টু, চট্টগ্রাম ব্যুরো : মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। অনিয়ম-দুর্নীতির ফলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থগিত হওয়া বিভিন্ন পদের ৪৫৫ জনকে নিয়োগ দিতে পেট্রো বাংলা অফিসে সোমবার থেকে মৌখিক পরীক্ষ শুরু করা হয়েছে। পরীক্ষা চলবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। তাদের নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে অন্তত ৫০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করে গেছে আওয়ামী সৈরাচারের দোসরেরা। সৈরাচারের দোসরদের নির্ধারিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে ইতোমধ্যে সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে পেট্রো বাংলা ও কেজিডিসিএল’র একটি অসাধু সিন্ডিকেট। নামমাত্র মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন এমন ভাগ্যবান ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন স্টোর কিপার পদে ২৮ জন, ভান্ডার সহকারী ৭জন, পরিবহন সকারী ১৪ জন, রাজস্ব সহকারী ৩৯ জন, ক্যাশিয়ার ১২ জন, সার্ভেয়ার ৩৯ জন, নির্মান পরিদর্শক- ১১ জন, রেডিও গ্রাফার ৫ জন, ফোরম্যান ১২ জন, জিঅইএস অপারেটর ১৫ জন, সহকারী চিকিৎসক ৮জন, বোরিং/বেন্ডিং/কমপ্রেসার অপারেটের কাম মেশিনিষ্ট-২জন, জেনারেটন অপারেটন ১০ জন, ড্রাফস্টম্যান ৭জন, ওয়েল্ডিং সুপারভাইজার ৬ জন, টেকনেশিয়ান-১৫৬ জন, প্যান্ট অপারেটর ৮৪ জন।

এই পরীক্ষা চট্টগ্রামে কেজিডিসিএল’র অফিসে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে ঢাকা পেট্রো বাংলার অফিসে। ওই নিয়োগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রামবাসী, কেজিডিসিএল’র গ্রাহকদের সংগঠন, অফিস স্টাফ ও ঠিকাদাররা। তাদের আন্দোলনের ফলে নিয়োগ স্থগিত করেছিল কর্তৃপক্ষ। এখন অনেকটা গোপনে ঢাকায় মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২২ সালে কর্মচারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ২০২৩ সালে। সরকারী বিধি উপেক্ষা করে প্রশ্নপত্র মুদ্রণ ও পরীক্ষা মূল্যায়ন করা করে প্রাইভেট কোম্পানী। দুপুর ১ টায় পরীক্ষা শেষ হলে বিকাল ৫ টায় পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ করা হয়। ২০২৪ সালের ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জুলাই বিপ্লবের পূর্বে ৯০শতাংশ মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ১ম ধাপে মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয় ওই বছরের ১৭ জুলাই। পূনরায় মৌখিক পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করলে একই বছরের ১৮ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবারো পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

অভিযোগ উঠেছে, তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের মন্ত্রী, এমপি, সচিব ও কেজিডিসিএল’র এমডি’র যোগসাজসে ৫০ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেনে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় এবং ফ্যাসিস্টদের দোষরদের লিখিত উত্তীর্ণ করা হয়। মৌখিক পরীক্ষায় যাদের ডাকা হয়েছে, তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে ৩/৫ লাখ টাকা করে আগাম নিয়ে নিয়েছে ওই চক্র।

জানা যায়, ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গত ১৮ জানুয়ারি কেজিডিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক মো. হাবিবুল গণি স্থগিত করেন। এর আগেও অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগে গত ২০২৪ সালের ২১ ও ২২ জুলাই স্থগিত করতে বাধ্য হন। স্থগিত হওয়া বিজ্ঞপ্তিতে গোপনে মৌখিক পরীক্ষার নামে পূর্ব মনোনীতদের নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা করছে-এমনটাই বলছে কেজিডিসিএল’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত) ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মো. মঞ্জুরুল হক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাউদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিবার কল দেওয়া হয়। কল না ধরায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।