সাইফুল ইসলাম, ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী রক্ষায় কঠোর আইন থাকলেও মাঠ পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় একের পর এক ঘটছে বিরল প্রজাতির প্রাণী হত্যার ঘটনা। খাদ্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করা এসব প্রাণী মানুষের হিংস্র আক্রমণের শিকার হয়ে নির্মমভাবে মারা যাচ্ছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রশাসনের নীরবতা এবং আইনের দুর্বল প্রয়োগের কারণেই এ ধরনের অমানবিকতা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
গত জুনে শৈলকুপার হাকিমপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে একটি বিলুপ্তপ্রায় কুমির। আশ্রয়ের পরিবর্তে গ্রামবাসীর উত্তেজিত জনতা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। ঘটনার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গড়াই নদীতে জেলেদের জালে আটকে পড়ে একটি শুশুক। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেওয়ার বদলে মেরে ফেলা হয়।
সর্বশেষ, শৈলকুপা পৌরসভার সাতগাছি এলাকায় ধানক্ষেতে আশ্রয় নেয় একটি মেছোবাঘ। ধান কাটার মেশিনে গুরুতর আহত হওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করে। ধারাবাহিক এসব হত্যাযজ্ঞে স্থানীয় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর রয়েছে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২। এই আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী কুমির, শুশুক ও মেছোবাঘ সংরক্ষিত প্রাণী। আইন অনুযায়ী, এসব প্রাণী হত্যা করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদ- অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ- হতে পারে। একই অপরাধ পুনরায় ঘটলে শাস্তি দ্বিগুণ হবে।
কিন্তু এই আইন কার্যকর থাকলেও মাঠ পর্যায়ে তার কোনো প্রয়োগ দেখা যাচ্ছে না। ফলে অপরাধীরা বিনা শাস্তিতে একই অপরাধ করে যাচ্ছে, যা আইনের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।
পরপর কয়েকটি ঘটনায় প্রাণীরা হত্যা হলেও স্থানীয় প্রশাসন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরিবেশবিদরা বলছেন, বন্যপ্রাণীর প্রতি অজ্ঞতা ও সচেতনতার অভাব থেকে এমন নির্মমতা তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে আইনের দুর্বল প্রয়োগ অপরাধীদের আরও সাহসী করে তুলছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এভাবে হত্যা চলতে থাকলে শৈলকুপার পরিবেশ থেকে একসময় বিরল প্রজাতির প্রাণী সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এতে শুধু প্রাণী নয়, পুরো পরিবেশের ভারসাম্য ভয়াবহভাবে বিঘিœত হবে।
তাদের মতে, এখনই যদি কঠোর আইন প্রয়োগ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বন্যপ্রাণীর জন্য নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা না হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি প্রাণীবিহীন প্রকৃতির মুখোমুখি হতে হবে।