গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে পুরো নগরীতে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার শান্তি কামনায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ প্রার্থনার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যা শেষ পর্যন্ত গাসিক সচিব নমিতা দে-কে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা হামিদা বেগমকে সাময়িক বরখাস্তের মতো শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।
গাসিক সচিব নমিতা দে স্বাক্ষরিত ২০ মার্চের ওই চিঠিতে বলা হয়— ‘২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের অংশ হিসেবে সুবিধাজনক সময়ে আপনার মসজিদ/মন্দির/গির্জা/প্যাগোডায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার শান্তি কামনা, দেশ ও জাতির উন্নতি এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে বিশেষ প্রার্থনা করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নগর ভবনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকে দাবি করেন, ইসলাম ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কারও আত্মার মাগফিরাত চাওয়া হলেও ‘আত্মার শান্তি কামনা করা হয় না। ফলে এটি বিতর্কের জন্ম দেয়।
চিঠি প্রত্যাহার ও সংশোধন
পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে গাসিক কর্তৃপক্ষ দ্রুত চিঠিটি প্রত্যাহার করে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দিয়ে নতুন চিঠি ইস্যু করে, যেখানে শুধুমাত্র দেশ ও জাতির উন্নতির জন্য প্রার্থনার কথা উল্লেখ করা হয়।
সচিবের ব্যাখ্যা ও দোষী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
এ বিষয়ে গাসিক সচিব নমিতা দে সাংবাদিকদের জানান, তার অফিসের সাবেক অফিস সহকারী ও বর্তমানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হামিদা বেগম পুরনো বছরের চিঠি এডিট করে নতুন ফাইলের সঙ্গে উপস্থাপন করেন। ব্যস্ততার কারণে তিনি সেটি না পড়ে স্বাক্ষর করে দেন। পরবর্তীতে বিষয়টি নজরে আসতেই তা প্রত্যাহার করে নতুন চিঠি ইস্যু করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে শোকজ করেন।
উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
এই ঘটনা সরকারের উচ্চ মহলের নজরে এলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নমিতা দে-কে বদলি করে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হিসেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করে। পাশাপাশি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হামিদা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গাসিক সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই ঘটনার পর নগরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, অসাবধানতার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে, আবার কেউ কেউ একে প্রশাসনিক গাফিলতি বলে মনে করছেন। তবে সবার একটাই দাবি—এ ধরনের বিতর্ক যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে।