বর্তমান সময়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও ব্যতিক্রম এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ‘দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন’। তরুণদের এই উদ্যমী জনপ্রিয় সংগঠনটি আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যে স্বচ্ছতা ও সৃজনশীল পদ্ধতির অনুসরণ করছে, তা সত্যিই অভাবনীয় এবং প্রশংসনীয়।

সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে মুহাম্মদ আবু আবিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন "দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন"। যার মাধ্যমে তিনি তরুণদের একত্রিত করে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এই সংগঠনের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাটা হল- আবিদ এর ইউনিক আইডিয়া ও তার বাস্তবায়ন করা।

যেমন- অসহায় ও এতিম শিশুদের নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমন, বন্যা পরবর্তী চিকিৎসা সেবা, প্রাকৃতিক দূর্যোগে ধ্বংস বাড়ি পুনরায় মেরামত করে দেয়া, বৃদ্ধাশ্রমে ঈদ পালন, বৃক্ষের পরিচর্যায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা, ভাসমান জেলেদের সাথে কুরবানির রান্না মাংস খাওয়া, হিজড়া নিয়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন, বিনামূল্যে দূর্বার তারুণ্য ব্লাড সোসাইটি এর নামে মানুষকে রক্তের ব্যবস্থা করে দেয়া, এতিমখানায় ভ্যালেন্টাইন ডে পালন, ফ্রী ঈদ শপিং, শীতের রাতে গরম খাবার, ঈদের দিনে স্টেশনে বাচ্চাদের সেমাই খাওয়ানো ও বকশিস দেয়াসহ আরও অনেক ব্যতিক্রমী প্রজেক্ট করেছে ফাউন্ডেশনটি।

এই সংগঠনের সবচেয়ে চমৎকার দিক হলো—এখানে কোনো সদস্যের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয় না, এমনকি সাধারণ জনগণের কাছ থেকেও অনুদান গ্রহণ করা হয় না। বরং, প্রতিটি সামাজিক উদ্যোগ কিংবা অনুষ্ঠান শুরু হয় একটি লিখিত প্রজেক্ট প্রস্তাবনা তৈরি করে। এই প্রস্তাবনায় প্রকল্পের উদ্দেশ্য, সম্ভাব্য কার্যক্রম এবং পুরো আনুমানিক খরচ উল্লেখ থাকে সুস্পষ্টভাবে।

এরপর এই প্রস্তাবনা নির্দিষ্ট কিছু দাতার কাছে পাঠানো হয়। যিনি প্রথমে সম্পূর্ণ প্রকল্পের অর্থ এককভাবে দিতে সম্মত হন, তাকেই করা হয় ওই প্রকল্প বা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। অর্থাৎ, দাতা শুধু পৃষ্ঠপোষকই নন, সম্মানিত অতিথিও বটে। এতে একদিকে যেমন দান প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় স্বচ্ছতা ও গর্বের অনুভব, অন্যদিকে সংগঠনের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয় জবাবদিহি।

অনুষ্ঠান বা কার্যক্রম শেষ হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উক্ত দাতার কাছে পাঠানো হয় পূর্ণাঙ্গ হিসাব বিবরণী, বাংলা ভাষায় পিডিএফ ফাইল আকারে। এতে প্রতিটি খরচের বিস্তারিত উল্লেখ থাকে। আরও বিস্ময়কর হলো—যদি কোনো অর্থ অবশিষ্ট থাকে, তবে তা দাতার কাছে ফেরত পাঠানো হয়, যা আজকের দিনে একটি দুর্লভ দৃষ্টান্ত। এজন্য শতাধিক প্রজেক্ট সম্পন্ন হলেও দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন এর অনুদানকারী কোন দাতা তাদের নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন নি।

এ সম্পর্কে দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আবু আবিদ বলেন, আমাকে অনেকেই মাঝেমধ্যে জিজ্ঞেস করে, এতবড় সংগঠন, কিন্তু ফান্ড জমিয়ে না রেখে বোকামি করছি না তো? আমি তাদের সবাইকেই বলি, এটা ঠিক যে, সংগঠন চালাতে হঠাৎ অনেক সময় অর্থের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তারজন্য সংগঠনের ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমানোটা ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দ নয়। সংগঠন মানে সংঘবদ্ধ। হঠাৎ অর্থের বিশেষ প্রয়োজন হলে আমরা সকলে এক হয়ে তা মোকাবিলা করি। তখন আমাদের পাশে শুভাকাঙ্ক্ষীরাও দাঁড়ান। কথায় আছে, অর্থই সকল অনর্থের মূল। আমাদের ফান্ডে কোন অর্থ নেই। তাই এই সংগঠনে কখনও কারও মধ্যে পদ-পদবীরও লোভ জাগবে না, বলে আমি বিশ্বাস করি।

এছাড়াও মুহাম্মদ আবু আবিদ আরও বলেন, দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশন সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় তৈরি একটা প্লাটফর্ম। তাই অনুদানকারী অথবা সরকারি- বেসরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সকলকে আমরা জবাবদিহিতা করতে বাধ্য আছি। আমাদের আয় ব্যায়ের হিসাব যে কেউ জানতে চাইলে, আমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে তার নিকট প্রকাশ করি।

এই ব্যতিক্রমী আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও স্বচ্ছতা দূর্বার তারুণ্য ফাউন্ডেশনকে করে তুলেছে দেশের অন্যতম বিশ্বাসযোগ্য ও অনুকরণীয় সামাজিক সংগঠন। তরুণদের এই উদ্যোগ সমাজে দায়বদ্ধতা, নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার এক নতুন বার্তা বহন করে।