গোপালগঞ্জে এনসিপির পূর্বে নিধারিত সমাবেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী ছাত্রলীগের হামলায় প্রতিবাদ দেশে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মহাসড়ক ব্লকেড কমসূচী পালন করেছে। স্থানীয় সংবাদাতাদের পাঠানো সংবাদ।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাকর্মীদের ওপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে এনসিপি ও এর মিত্র ছাত্র সংগঠনগুলো। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর ২ নম্বর গেট মোড়ে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। প্রতিবাদকারীরা সড়কে অবস্থান নিলেও যান চলাচলে কোনো বাধা সৃষ্টি করেননি।

সমাবেশে অংশ নিয়ে এনসিপি নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “প্রশাসন যদি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তবে গোপালগঞ্জের পরিণতি হবে ধানম-ির ৩২ নম্বরের মতো।” এ সময় মুজিববাদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। স্লোগানে স্লোগানে ওঠে- “মুজিববাদ মুর্দাবাদ”, “মুজিববাদের ঠিকানা-এই বাংলায় হবে না”, “সারা বাংলায় খবর দে-মুজিববাদের কবর দে”।

বিক্ষোভে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন।

গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ বলেন, গোপালগঞ্জে আমাদের সহযোদ্ধাদের ওপর আওয়ামী লীগ যে বর্বরতা চালিয়েছে, তার পরিণাম ভয়াবহ হবে। প্রশাসন নির্লিপ্ত থেকেছে-এটা স্পষ্ট। আমরা সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, এবার আর ছাড় নেই।”

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আলী বলেন, “ গোপালগঞ্জের হামলা শুধু এনসিপির ওপর নয়, এটা ছিল পুরো জুলাই আন্দোলনের বিরুদ্ধে হামলা। এতে স্পষ্ট হলো, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা কতটা প্রকট। আওয়ামী স্বৈরাচার ও তাদের গৃহপালিত সন্ত্রাসীরা আবারও মাথাচাড়া দিচ্ছে। এনসিপি এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।”

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ, যুগ্ম সদস্য সচিব সাগুপ্তা বুশরা, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম সদস্য সচিব রিজাউর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম শাখার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ইবনে হোসাইন জিয়াদ ও মুখ্য সংগঠক তাওসিফ ইমরোজ।

সমাবেশের আগে বিক্ষোভকারীরা আশপাশের এলাকায় মিছিল করে বিভিন্ন স্লোগানে উত্তাল পরিবেশ তৈরি করেন।

প্রসঙ্গত, আজ দুপুরে গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে নেতারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। এনসিপির অভিযোগ, হামলায় জড়িত ছিল আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।

কুমিল্লা অফিস: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লায় মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াত, এবিপার্টি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরাও।

বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৫টা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় আধা ঘন্টারও বেশি সময় সড়ক অবরোধ করেন তারা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট বুড়িচং উপজেলার নিমসার ও চট্টগ্রামমুখী লেনে পদুয়ার বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। এতে আটকা পড়ে শত শত যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও প্রাইভেট কার। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করে বলেন, গোপালগঞ্জে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে ফেরার পথে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয় এনসিপি নেতাদের ওপর। যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহাসড়ক ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে আমরা জানতে পারি আমাদের নেতৃবৃন্দ নিরাপদে সেখান থেকে সরে এসেছেন, তাই আমরা মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছি। এছাড়াও আমাদের কেন্দ্রীয় নেতারা জনগণের ভোগান্তি কমাতে সড়ক ছেড়ে দিতে বলেছেন।

অবরোধ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলা শাখা আহ্বায়ক মুহাম্মদ সাকিব হোসেন, সদস সচিব মুহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম, মহানগর আহ্বায়ক আবু রায়হান, সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন মুহাম্মদ রুবেল, ইনকিলাব মঞ্চ ও এবি পার্টির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সামদানী, এনসিপি নেতা মাসুমুল বারী কাওসার, কাজী জায়েদ, ইমপা ফারহাসহ অন্যান্যরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলা শাখা আহ্বায়ক মুহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, কুমিল্লা থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের বীজ বপণ হয়েছিল। কুমিল্লা থেকেই ফ্যাসিবাদের কবর রচনা করা হবে। যদি প্রয়োজন পড়ে আমরাও গোপালগঞ্জ যেতে প্রস্তুত।

সিলেট ব্যুরোঃ গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশে হামলার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোর ন্যায় সিলেটেও ব্লকেড কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

গতকাল বুধবার বিকাল ৫টায় নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে তারা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে এই ব্লকেড কর্মসূচি প্রদর্শন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-নেতৃবৃন্দ।

কর্মসূচির শুরুতে নেতৃবৃন্দরা নগরীর চৌহাট্টায় এনসিপির নেতাকর্মীরা ‘মুজিববাদ, মুর্দাবাদ’, ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কী তোর বাপ দাদার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরবর্তীতে তারা রাস্তায় কুশপুত্তলিকায় আগুন জ্বালিয়ে তারা এই বিক্ষোভ কর্মসূচি দেন। এসময় গুরুত্বপূর্ণ চৌহাট্টা পয়েন্টে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

পরবর্তীতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সিলেট জেলা ও মহানগর এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেটের নেতৃবৃন্দরা মিছিল সহকারে নগরীর দক্ষিণ সুরমার চন্ডীপুল চত্ত্বরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। সেখানে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বিরোধী ছাত্র ও যুব জনতার স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে চন্ডিপুল এলাকা। আধা ঘণ্টা পরে এনসিপির আহ্বানে মহাসড়ক থেকে এই ব্লকেড তুলে নেওয়া হয়। এসময় বিক্ষোভ মিছিলে জেলা ও মহানগর এনসিপির বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীরা উপ¯ি’ত ছিলেন।

নারায়নগঞ্জ সংবাদদাতা : গোপালগঞ্জে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঘন্টাব্যাপী ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছেন এনসিপি ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মী। বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল ৫ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড়ে অবরোধ করেন এনসিপি তারা। এসময় সড়কে বাঁশ, ইট ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন তারা। পরে আবার কেন্দ্রীয় কর্মসূচি মতে ব্লকেড কর্মসূচি প্রত্যাহার করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। হামলার জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবি করে নানা শ্লোগান দেন এনসিপির নেতৃবৃন্দ।

এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু জানান, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সাইনবোর্ডে ছাত্র-জনতা ১ ঘন্টা ব্লকেড কর্মসূচি করেছে। হামলার জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে।

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত আছে।