সিরাজগঞ্জে গণস্বাস্থ্য গ্রামীণ টেক্সটাইল মিলের রাসায়নিক বর্জ্য দূষণের শিকার হয়ে সদর উপজেলার দৈভাঙ্গা ও ফুলজোড় নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে নদীর দূষিত পানি ব্যবহার করতে পারছে না স্থানীয়রা।

সিরাজগঞ্জ টু নলকা সড়কের পাশে কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট শিমুলতলা নামক স্থানে প্রায় ৫৪ বিঘা জমির ওপর নব্বইয়ের দশকে গড়ে ওঠে গণস্বাস্থ্য গ্রামীণ টেক্সটাইল মিলস। হ্যান্ডলুম তাঁতিদের উৎপাদিত গ্রামীণ চেকের থান কাপড়, শাড়ি লুঙ্গি সহ 'র' কাপড় প্রসেসিং এন্ড ডায়িং করা হয় এখানে। এই প্রসেসিংয়ের কেমিক্যাল যুক্ত বর্জ্যপানি কার্যকর ইটিপি প্লান্টে শোধন না করেই পাইপ লাইনের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত দৈভাঙ্গা নদীর বিলগজারিয়া নামক স্থানে প্রবাহমান নদীতে ফেলছে। এই দৈভাঙ্গা নদীর বহমান পানি গিয়ে পড়ছে পার্শ্ববর্তী ফুলজোড় নদীতে।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসি অভিযোগ করে জানান, কুচকুচে কালো দুরগন্ধময় কেমিক্যাল যুক্ত বর্জ্যপানি বহমান নদীতে ফেলার কারণে আমরা নদীর পানি ব্যবহার করতে পারি না। গ্রামাঞ্চলের মানুষ গোসল করাতো দূরের কথা; গবাদিপশুও সাঁতারানির জন্য পানিতে নামানো যায় না। দূষিত পানি যে ব্যবহার করে সে চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়।

এছাড়া কেমিক্যাল যুক্ত এই বর্জ্য নদীর পানিতে সয়লাব হয়ে ধ্বংস হচ্ছে মাছ ও মৎস জাতীয় জলজ প্রাণী। মারাত্মক হুমকির মুখে নদী এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য।'

বিলগজারিয়া গ্রামের কৃষক ওয়াজেদ আলী, আকতার হোসেন, জুড়ান আলী শেখ, আনোয়ার শেখ, জয়নাল আবদীন, শাহজাহান আলী শেখ, ভ্যানচালক আব্দুল মালেক সহ আরও অনেকেই বলেন, ওই লাইন বসানোর সময়

আমরা প্রতিবাদ করেছি; কিন্তু স্থানীয় কিছু দালাল চক্রের কারণে প্রতিবাদে কাজ হয় নাই। আওয়ামী লীগের আমলে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির আমলে বিএনপির কতিপয় সুবিধাবাদীর কারণে এটা ঠেকাতে পারি নাই। এখন গরু বাছুর সাঁতারানি কিংবা নিজেরা ডুব-গোসল করতে পারি না। স্থানীয় জোসনা খাতুন ও জায়েদা বেগম বলেন, এই পানিতে নেমে আমাদের অনেকগুলো হাঁস মারা গেছে। পঁচা কালো পানিতে কাপড় ধোয়াসহ গোসলে নামা যায় না। আমরা গ্রামের কৃষক মানুষ যামু কোনে বলে আক্ষেপ করেন।

নদীর পানি ও পরিবেশ দূষণের কারণে ইতোমধ্যেই মিলটিতে ২০১৭ সালে দুই লক্ষ বিয়াল্লিশ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে নয় লক্ষ ৯৯ হাজার ৪৮৮ টাকা এবং ২০২১ সালে তৃতীয় দফায় নয় লক্ষ ১৩ হাজার টাকা জরিমানার শান্তি দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ৪র্থ দফায়ও মিলের বজ্যের স্যাম্পল টেস্টে নদীতে ফেলা যাবে না এমন ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ায় মিলটি বন্ধ সহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রস্তুতি চলছে বলে সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তুহিন আলম জানিয়েছেন।

পরিবেশ আন্দোলন নেতা অ্যাডভোকেট শহীদুল ইসলাম বলেন, নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে। কারখানার বর্জ্য নদীতে ফেলে নদী দূষণ করা প্রচলিত পরিবেশ আইন এবং জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেয়া স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলার শামিল। এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্য গ্রামীণ টেক্সটাইল মিলের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার ইসহাক হোসেন বলেন, মিলটিতে অব্যাহত লোকসানের কারণে আমরা বেকায়দায় আছি। প্রোপার ইটিপি ইউজে অর্থ সংকট সমস্যায় ফেলেছে। তবে চেষ্টা চলছে। খুব শীঘ্রই এই সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হবো।