কক্সবাজার দক্ষিণ সংবাদদাতা : কক্সবাজার শহরে বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য উচ্ছেদচেষ্টাকে কেন্দ্র করে বিমান বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক যুবক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গতকাল সোমবার বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির কাছে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সমিতিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।

নিহত যুবকের নাম শিহাব কবির নাহিদ (৩০)। তিনি ওই এলাকার শিক্ষক দম্পতি পিটিআই এর সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট নাছির উদ্দীন ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা আমেনা বেগমের একমাত্র সন্তান।

এছাড়াও আহতদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মী শাহাদাত হোসেন। বাকীদের নাম ও পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় একজন নিহত এবং পাঁচ জন চিকিৎসাধীন থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পুলিশ বক্সের কর্তব্যরত ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম।

সমিতিপাড়ার বাসিন্দারা বলেন- ‘সোমবার দুপুরে বিমানবন্দর সম্প্রসারণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য এলাকাবাসীকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে বিমান বাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর প্রতিনিধিদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এজন্য বেলা ১২টার দিকে সমিতিপাড়ার বাসিন্দা মো. জাহিদসহ আরও কয়েকজন ইজিবাইকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আসছিলেন। তাদের বহনকারী গাড়িটি ডায়াবেটিস পয়েন্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর চেকপোস্টে পৌঁছালে থামানো হয়। সে সময় বিমানবাহিনীর সদস্যরা জাহেদকে গাড়ি থেকে নামতে বললে তাদের মধ্যে তর্ক হয়। পরে জাহেদকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে খবর পেয়ে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে বিমান বাহিনীর ওপর চড়াও হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।’ এতে এক ব্যক্তি নিহত হয়।

এলাকাবাসী জানান, ‘সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিমান বাহিনীর সদস্যরা এলাকাবাসীকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাঁকা গুলী করেন। এতে কমপক্ষে ১০-১৫ জন গুলীবিদ্ধ হয়েছেন। পরে স্থানীয়রা কয়েকজনকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন- ‘এ ঘটনায় একজন নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে তা উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আইএসপিআর জানিয়েছে, কক্সবাজার বিমানবাহিনী ঘাঁটি সংলগ্ন সমিতিপাড়ায় কিছু দুর্বৃত্ত অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বিমান বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

শিহাব বিমান বাহিনীর গুলীতে মারা যাননি: আইএসপিআর

স্টাফ রিপোর্টার: কক্সবাজার বিমান ঘাঁটির কাছে সংঘর্ষের মধ্যে যে তরুণের মৃত্যু হয়েছে, তিনি বিমান বাহিনীর গুলীতে মারা যাননি বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর)। গতকাল সোমবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে বাহিনীটি।

এতে বলা হয়, কক্সবাজার বিয়াম স্কুলের পাশে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট থেকে স্থানীয় একজনের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় বিমান বাহিনীর প্রভোস্ট কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ঘাঁটির অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সমিতিপাড়ার আনুমানিক দুই শতাধিক স্থানীয় লোকজন বিমান বাহিনীর ঘাঁটির দিকে অগ্রসর হলে বিমান বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বাধা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বিমান বাহিনীর চেকপোস্ট এলাকায় বিমান বাহিনীর সদস্য ও সমিতি পাড়ার কতিপয় দুষ্কৃতকারীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে কতিপয় কুচক্রী মহলের ইন্ধনে দুর্বৃত্তরা বিমান বাহিনীর সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। এ সময় দুর্বৃত্তদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন আহত হন। যার মধ্যে বিমান বাহিনীর ৪ জন সদস্যও (১ জন অফিসার ও ৩ জন বিমানসেনা) আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং শিহাব কবির নাহিদ নামের এক যুবককে গুরুতর আহত অবস্থায় বিমান বাহিনীর গাড়িতে করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ সময় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার্থে বিমান বাহিনীর সদস্যদের কর্তৃক বিমান বাহিনীর জঁষবং ড়ভ ঊহমধমবসবহঃ অনুয়ায়ী ফাঁকা গুলী ছোড়া হয়। তবে স্থানীয় জনসাধারণের ওপর কোনো প্রকার তাজা গুলী ছোড়া হয়নি। বিমান বাহিনীর আহত সদস্যরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিমান বাহিনী জানায়, স্থানীয় জনগণের ইটপাটকেলের আঘাতে বিমান বাহিনীর গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। এছাড়াও স্থানীয় জনগণ ঝোপঝাড়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছিল যা পরবর্তীতে বেশি সম্প্রসারিত হয়নি। এমতাবস্থায় একটি কুচক্রী মহল বিমান বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিমান বাহিনীর গুলীতে উক্ত যুবক নিহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, যা সত্যি নয়। এক্ষেত্রে প্রচারিত গুলীর খোসার ছবিটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, উক্ত খোসাটি ফাঁকা গুলীর (ইষধহশ ঈধৎঃৎরফমব)। যা প্রাণঘাতি নয়, কেবল শব্দ তৈরি করে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যুবক নিহতের ঘটনায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গভীর শোক ও পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছে। এছাড়াও লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, উক্ত ঘটনা প্রকাশে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার-এর নাম বিমান বাহিনী ঘাঁটি শেখ হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে- যা সত্য নয়।

উল্লেখ্য যে, উক্ত ঘাঁটির নাম ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিবর্তন করে বিমান বাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজার রাখা হয়, যা বর্তমানেও বহাল রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী দেশের আকাশসীমা রক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের আপামর জনসাধারণের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও বিমান বাহিনী দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বদা সচেষ্ট থাকবে। দেশের জনগণের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।