সরকারি নিষেধাজ্ঞার পর দেশের অধিকাংশ জায়গায় যখন প্রশাসনিক ভাবে ধ্বংস করা হচ্ছে আগ্রাসী প্রজাতির ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা, তখন উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানেই বেড়ে উঠছে এই নিষিদ্ধ গাছের চারা। এমনকি সরকারি প্রোগ্রাম শেষে উপহার হিসেবে তুলে দেয়া হচ্ছে সাধারণ জনগণের হাতে।

সরকারি ভাবে প্রজ্ঞাপন হওয়ার ৩ মাস অতিবাহিত হলেও নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সরকারি সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে এখনোও অপসারণ করা হয়নি আগ্রাসী প্রজাতির আকাশমনি গাছের চারা। সরকারি সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেও থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন আকাশমনি গাছের চারা। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রজাতি হওয়া সত্ত্বেও উপজেলা পরিষদ চত্বরে থাকা নার্সারিতে এসব চারাগাছ এখনও শোভা পাচ্ছে। তবে সেগুলো ধ্বংসে কোনো রকম উদ্যোগ দেখা যায়নি। কর্তৃপক্ষ বলছেন অধিদপ্তর হতে চিঠি বা নির্দেশনা না পাওয়ার তারা এ আকাশমণির চারা গাছগুলো এখনো অপসারণ করেননি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, উপজেলার সরকারি সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর প্রধান ফটোক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে প্রায় ৮-১০ হাজার বনজ, ফলদ ও ঔষধি জাতের চারা রয়েছে। আর এর মধ্যেই দুই সারিতে থরে থরে সাজানো রয়েছে প্রায় ৩-৪ হাজার আগ্রাসী প্রজাতির আকাশমনির চারাগাছ। তবে কতৃপক্ষ বলেন এগুলো তারা বিক্রি করা থেকে বিরত আছেন।প্রশাসন বলছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বন বিভাগ ও কৃষি বিভাগ। বন বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চারা গুলো গত বছরের তৈরি এবং বর্তমানে বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এগুলো কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে সে বিষয়ে এখনও কোনো তারা সিদ্ধান্ত আসেনি।

জানাযায়, সরকারিভাবে গত ১৫ মে ২০২৫ এর তথ্যমতে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচি সংরক্ষণের স্বার্থে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীতে আগ্রাসী প্রজাতির ইউক্যালিপটাস এবং আকাশমনি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা হলো। উক্ত আগ্রাসী প্রজাতির গাছের চারা রোপণের পরিবর্তে দেশিয় প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন করতে হবে।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সরকারি নার্সারিতে নিষিদ্ধ গাছ রোপণ ও সংরক্ষণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। চলনবিল জীববৈচি রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, আগ্রাসী প্রজাতির ইউক্যালিপটাস এবং আকাশমনি গাছের চারা সরকার নিষিদ্ধ করেছে তাই সবার সম্মলিত প্রচেষ্টায় তা বিক্রি বন্ধ করতে হবে। এবং যে গাছগুলো আছে তা দ্রুত আপসারনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

উপজেলা বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জাহেদুল ইসলাম জানান, “আকাশমণির চারা প্রস্তুত আছে তবে বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রতিটি চারা ৯ টাকা দরে তৈরি করা হয়েছিল, এগুলো গত বছরের চারা। তারা আফিস থেকে নিষিদ্ধ চারাগুলোর চাহিদা পাঠিয়েছেন। তবে কীভাবে নিষ্পত্তি করা হবে সে বিষয়ে এখনও নির্দেশনা পাইনি তিনি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ডা. ভবসিন্ধু রায় বলেন “কোনো নার্সারিতে নিষিদ্ধ প্রজাতির গাছের চারা পাওয়া গেলে প্রশাসনের সহযোগিতায় তা ধ্বংস করা হবে। তার জানামতে উপজেলায় কোনো নার্সারিতে এ ধরনের চারাগাছ নেই। আর সরকারি নার্সারিতে মজুদ চারাগাছ থাকলে সেটা তাদের আধিদপ্তর সিদ্ধান্ত নিবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) মারুফ আফজাল রাজন বলেন, “ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি চারা রোপণ নিষিদ্ধ। উপজেলার সরকারি সামাজিক বনায়ন নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এই চারা ধ্বংসের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি লিখিত জানিয়েছেন। তারাও আধিদপ্তরে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। আধিদপ্তর থেকে কি ভাবে নিষ্পত্তি হবে এ বিষয়েক সিদ্ধান্ত আসলেই তা বাস্তবায়ন হবে। তার আগে তারা চারাগাছগুলো সংরক্ষণ করবে।