আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাসহ চারজনকে ৭ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান। রিমান্ডে যাওয়ারা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ এবং সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার বহিষ্কৃত আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। গুলশান থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই মোক্তার হোসেন জানান, এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান।

শনিবার সন্ধ্যার পর গুলশান ২ নম্বরে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসার সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরের করা গুলশান থানার মামলায় ছয়জনকে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তারদের বাইরে এক আসামি হলেন কাজী গৌরব অপু, যিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। অপর আসামি শিশু।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ১৭ জুলাই সকাল ১০টায় আসামি বৈষম্যবিরোধী নেতা রিয়াদ ও অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদের বাসায় যান। তখন তারা হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যায়িত করে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দেন এবং টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ ৫ লাখ টাকা ও ভাইয়ের কাছে থেকে নিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা দেন। এরপর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার ফ্ল্যাটের দরজায় সজোরে ধাক্কা মারেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে জানানো হলে আসামিরা চলে যায়। ২৬ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় আবার রিয়াদের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা বাদীর বাসার সামনে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন। বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানান। তখন আসামিদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে তাৎক্ষণিক গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে হাতেনাতে আটক করে। এ সময় অন্য আসামি অপু পালিয়ে যান।

চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেফতার রিয়াদের

সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই

স্টাফ রিপোর্টার : সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেফতার আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ)-কে কিছু সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি বলে দাবি করা হয়েছে। এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পরিচালক) ফয়সল হাসান স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়।

এতে বলা হয়, গতকাল ২৭ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে (টিভি, অনলাইন, সোশ্যাল মিডিয়া, প্রভৃতি) চাঁদাবাজি করতে গিয়ে আটক আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে।

সংবাদটি সর্বৈব মিথ্যা এবং এর কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ) নামে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি বা কোনো ধরনের প্রতিনিধির অস্তিত্ব নেই। মন্ত্রণালয়ের নাম ব্যবহার করে কেউ কোনো অপরাধ বা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ে লিপ্ত হলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বহন করবে। এর সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তবে একই সঙ্গে গণমাধ্যমের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে। ভবিষ্যতে এ ধরনের সংবাদ প্রকাশ করার আগে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যাচাই-বাছাই এবং আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক হওয়ার জন্য গণমাধ্যমসমূহকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় বাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সংবাদ সম্মেলন। রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাড়িতে চাঁদাবাজির ঘটনা সামনে আসার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি বাদে সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া এই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি।

রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানান সংগঠনটির সভাপতি রিফাত রশিদ। তিনি বলেন, বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করে নামে-বেনামে অনেকেই নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন। সংগঠনটির অনেক সদস্য একাধিক রাজনৈতিক দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়েছেন। সেসব রাজনৈতিক দলের শেল্টারে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে জুলাইয়ের অনেক যোদ্ধা নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ছেন। যেটা নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, কমিটি দেওয়ার আগেই আমরা সতর্ক করেছিলাম, কোনও ধরনের অপকর্ম বরদাস্ত করা হবে না। সেই মোতাবেক আমাদের অর্গানোগ্রামের সদস্যদের সঙ্গে একটি মিটিং হয়। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটির কার্যক্রম আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হচ্ছে।

পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে রিফাত রশিদ বলেন, পরবর্তী সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, সে সম্পর্কে আমরা আগে বসবো তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনও কাজ এই প্ল্যাটফর্ম করবে না, সেটা আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই।

তিনি বলেন, যারা জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করে এই সংগঠনটি বাঁচিয়ে রাখতে চান তাদের আমরা বলতে চাই, এখান থেকে আপনারা কোনও আর্থিক সহায়তা বা ক্ষমতা পাবেন না। তারপরও যারা কাজ করতে চান, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করবো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে কেউ যদি কোনও অপকর্ম করার চেষ্টা করে, আপনারা তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিন। কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরাও আপনাদের সহায়তা করবো।