ঝালকাঠি সংবাদদাতা : ঝালকাঠিতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সর্ববৃহত্তর নার্সিং কলেজটি ২০২০ সালে কয়েকজন নার্স শিক্ষক এবং একজন অফিস স্টাফ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ শিক্ষক অন্যত্র বদলি হয়ে যান। এর পরে পদায়ন না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই সিনিয়র স্টাফ নার্স ও নার্সদের শিক্ষক হিসেবে পদায়ন করায় শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে নার্স শিক্ষার্থীরা। এমনকি কোন পুর্ব অভিজ্ঞাতা ছাড়াই এই কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে ৪ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন নলছিটি উপজেলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স গীতা রানী সমাদ্দার। শিক্ষকদের সকাল ৮টায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা আসেন ৯টা/১০টায়। আড়াইটায় ছুটি হওয়ার কথা থাকলেও ১টা থেকে দেড়টায় চলে যান।

নার্সি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ঝালকাঠি নার্সিং কলেজে নিয়মিত ক্লাস না হওয়া, নিয়মিত শিক্ষকদের দেরী করে কলেজে আসা ও সময়ের আগেই কলেজ ত্যাগ, ল্যাব কার্যক্রমে অনিয়ম এবং শিক্ষকদের অবহেলার কারণে শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না। এতে ভবিষ্যতে দক্ষ নার্সের সংকট দেখা দিতে পারে। যা সরাসরি দেশের স্বাস্থ্যসেবায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, নিয়মিত ক্লাস না হওয়ায় তাদের পাঠ্যসূচি অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। ব্যবহারিক ক্লাস ছাড়াই তত্ত্বীয় পড়ালেখার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী বলেন, “শুধু বই পড়ে নার্সিং শেখা যায় না। রোগীর সামনে কীভাবে কাজ করবো, সেটা হাতে-কলমে শিখতে হয়। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগটাই ঠিকমতো মিলছে না।” অনেক সময় দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে অপেক্ষা করেও শিক্ষকের দেখা পান না তারা।

বেশ কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন যে, অনেক শিক্ষক ক্লাসে এলেও পাঠদানের মান খুবই দুর্বল। তারা বিষয়টি ঠিকভাবে বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। নেট ঘেটে পড়তে বলে চলে যান। ফলে শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

এই পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। অভিভাবকদের মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নার্সিং শিক্ষার এই অব্যবস্থা ভবিষ্যতে জাতিকে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ একজন নার্স শুধু পেশাজীবী নয়, তিনি একজন রোগীর প্রাণরক্ষা ও মানসিক সান্তনার অন্যতম ভরসা। যদি তিনি সঠিক প্রশিক্ষণ না পান, তবে রোগীর চিকিৎসার মান পড়ে যাবে এবং জনগণ ভালো সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, স্যার ম্যামরা সবাই বরিশাল থেকে আসে। তারা সঠিক সময় কলেজে আসেনা আবার আসার পর তারা বাসার বাজার করতে যায়। কীর্তিপাশা বাজারে এখান থেকে বাজার নিয়ে যায় বরিশালে।

স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলেন আমার বাড়ির পাশে মনোরম পরিবেশে এই কলেজটি হওয়ার কারনে ১ম চয়েজ এখানে দেই , আর আমার চান্স হয় এই খানে, পরে দেখি এটা আজাব। বিশাল বড় রকম পাপ করেছি এখানে ভর্তি হয়ে। কোন রকম নিজেদের চেস্টায় আগাচ্ছি। আমরা আসলে কিছুই জানিনা ২য় বর্ষে পড়েও।

এ বিষয় জানতে চাইলে অধ্যক্ষ গীতা রানী সমদ্দার বলেন আমি চেস্টা করছি প্রতিষ্ঠানকে একটি ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে। এ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন শিক্ষক ও ষ্টাফ নেই। হিসাব রক্ষক, অফিস সহকারী, পিয়ন ও নইটগার্ট নেই। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এনে ৭জন শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষা ও একাডেমীক কাজ। এ বিষয় ডিজিএনএম এ কথা বলছি। গত মাসে এ প্রতিষ্ঠানে ৩৮জন জনবল পদ সৃজন হয়েছে। কিছু শিক্ষক দুরে থাকায় মাঝে মাঝে একটু দেরী করে আসে। আমরা আর সচেতন হবো।