নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বিশকাকুনি ইউনিয়নের জালশুকা বাজারসংলগ্ন রেললাইনের পাশের একটি খাস জমিতে মুচি সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবার উচ্ছেদের পরিকল্পনা করে দুষ্কৃতকারীরা। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদকৃত পরিবারদের সাহস এবং সহযোগিতা করেছেন বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।
বর্তমানে পরিবারের নারী, শিশুসহ ২২ জন সদস্য এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিনের ঈদের ছুটিতে পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতিকারীরা এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
সহযোগীকে জানা গিয়েছে ‘আগে কয়েকটা ঘর ভাঙছিল। চামড়া কিননের টেহা-পয়সা লুট কইরা লইয়া গেছিল। আইজ দুপুরে দল বাইন্দা আইয়া বাকি সবার ঘর-বাড়ি ভাঙা গুড়াইয়া দিছে। গাছপালও কাইট্টা ফালাইয়া দিয়া গেছে। আর কোনো কিছুই নাই। তারা যা করছে, তা মাইনষের সাথে মাইনষে করে না। আমরা মুচারজাত দেই্খা কোন বিচার পাইনা। আমরার কী দোষ, বাবু, আপনিই কইন্ আমরার জন্মই কী দোষের? এই ২২ জন মানুষ লইয়া অহন আমরা কই থাকবাম?’
গতকাল বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জালশুকা এলাকার ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ অনীল রবিদাস। তাঁর অভিযোগ, পাশের ধারা গ্রামের সিরাজ মিয়া লোকজন নিয়ে দফায় দফায় তাঁর বাড়িতে হামলা করে এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন। এখন তিনি কোথায় থাকবেন, কী খাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
উপজেলা প্রশাসন, থানা-পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বিশকাকুনি ইউনিয়নের জালশুকা বাজারসংলগ্ন রেললাইনের পাশের একটি খাস জমিতে বংশ পরম্পরায়ভাবে বসবাস করে আসছে মুচি সম্প্রদায়ের পাঁচটি পরিবার। নারী-শিশু মিলে পরিবারগুলোর সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ২২ জন। সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী খলিশাউর ইউনিয়নের ধারা গ্রামের মৃত জানু মিয়ার ছেলে সিরাজ মিয়া ও বকুল মিয়া ওই জমিটি তাঁদের ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে দাবি করেন এবং পরিবারগুলোকে ওঠে যেতে বলেন। এ অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে সুনীল রবিদাস জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ করেন। এর জেরে সিরাজ মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে প্রথমে গত বৃহস্পতিবার সুনীল রবিদাসের বাড়িতে হামলা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধর করেন। সুনীলের অভিযোগ, হামলাকারীরা কোরবানীর চামড়া কিনার জন্য ধার করে আনা ও গচ্ছিত কিছু টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এরপর ঈদের পরদিন পুনরায় হামলা চালিয়ে তিনটি ঘর ভাংচুর করা হয়। ফের গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে হামলা চালিয়ে অবশিষ্ট দুটি ঘরও গুঁড়িয়ে দেয়াসহ সদস্যদের মারপিট করে উচ্ছেদ করা হয়। ফলে পরিবারের নারী, শিশুসহ ২২ জন সদস্য এখন আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। তবে তুই কোন জেলা প্রশাসন তাদের ঘরবাড়ি এবং আশ্রয়ের জন্য দ্রুত কাজ করছেন।