খুলনা মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের মোট ১৫ টি হিমাগার ৮ বছরের অধিক সময় ধরে নষ্ট হয়ে আছে। যা মর্গের ডোম থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ডোম সুশীল এবং সজল কুমার বলেন, ফ্রিজ ২ টা। তাতে ৯ টা বক্স রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে দু’টা ফ্রিজই অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে। সেখানে কোন লাশ রাখা যায়না বা ঠান্ডা হয়না। মৃতের পরিবার ব্যবস্থা করলে তা সংরক্ষণ করা হয় তা না হলে গরমের সময়ে ব্যাপক অসুবিধা হয়। ফ্রিজ থাকলে ভাল হত বলে তারা জানান।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মোহসীন আলী ফরাজী বলেন, এটা স্পর্শকাতর বিষয়। হিমাগারের ফ্রিজ ২০১৭ সাল থেকে নষ্ট এটা ঠিক নয়। একটি ফ্রিজের মধ্যে ছয়টি ট্রে থাকে। সেগুলো খুব উন্নতমানের। যখন ফ্রিজগুলো ইনষ্টল করা হয়েছিল তখন থেকে তা চালু ছিল। একটা ট্রে নষ্ট হওয়ার কারণে আমরা ৪টি ট্রে দিয়ে ফ্রিজগুলো চালিয়েছি। সর্বশেষে দু’টি দিয়ে আমরা কার্যক্রম চালিয়েছি। ফ্রিজগুলো যে পাওয়ার শোষণ করে তা একটি ট্রে চালানো সম্ভব নয়। তাছাড়া এক একটি মেরামত করতে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ফ্রিজগুলো মেরামত করেছি। গত একমাস আগেও মিটিং হয়েছে। সেখানে ফ্রিজগুলো মেরামতের বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা আন্তরিকভাবে কথাগুলো শুনেছে এবং নোট নিয়েছে। নতুন কোন মেশিন দেওয়া যায় কি না সেটা তারা নতুন অর্থ বছরে সিদ্ধান্ত নিবে। তিনি বলেন, একটি লাশ রাখা ব্যয়-সাধ্য ব্যাপার। প্রতিদিন রাখার জন্য এক হাজার টাকা গুণতে হয়। সবচেয়ে বেশী সমস্যা হয় বেওয়ারিশ লাশের ক্ষেত্রে। সব মেশিনগুলো নষ্ট হয়ে থাকার কারণে লাশ বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করতে হয় বলেও তিনি জানান।

খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার চন্দনশ্রী গ্রামে একটি নির্মানাধীন স্কুলের দু’তলা ভবন থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন বাগেরহাট জেলার হাকিমপুর ইউনিয়নের হানিফ শেখের ছেলে মইনুল ইসলাম। প্রথমে স্থানীয়রা তাকে কাজদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে আসার আগে তার মৃত্যু হয়। এরপর শুরু হয় আইনানুগ ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থা গ্রহণ শেষ হতে না হতেই শেষ হয়ে যায় ময়নাতদন্তের সময়। পরে লাশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় পরিবারের সদস্যদের। লাশ সংরক্ষণ করার জন্য গুণতে হয় নগদ দু’হাজার টাকা। এ অভিযোগ শুধু মাহিনুর বেগম এবং মাইনুল ইসলামের পরিবারের নয়। অনেকেই দায়ী করছেন। মেরামত না করার কারণে দীর্ঘ ৮ বছরের অধিক সময় ধরে নষ্ট হয়ে আছে হাসপাতালের হিমাগার। আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্যদের।

মাহিনুর বেগমের ছোটভাই মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, সংবাদ শুনে সকালে এখানে এসেছি। ফ্রিজিং ব্যবস্থা না থাকায় বরফ দিয়ে তার বোনের লাশটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। বরফ গলে পানি এবং সেই পানির মধ্যে বোনের লাশটি ভেসে থাকতে দেখে মন খুব খারাপ হয়ে যায়। এটা একটা অমানবিক কাজ। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানে এই দশা।