বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের শ্রদ্ধেয় রাহবার এটিএম আজহারুল ইসলাম প্রায় ১৪ বছর কারাগারে থাকার পর মুক্ত হয়েছেন। এর জন্য প্রথমে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। এরপর আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এতদিন ন্যায় বিচার ছিলো না, আদালতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে আদালত জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।’ এ মামলায় নিয়োগকৃত আইনজীবীদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাশেম আলীকে ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ করা হয়েছে । ‘যারাই এসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে যেখানে যে পর্যায়ে জড়িত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। তা না হলে এই খারাপ সংস্কৃতি চালু থাকবে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’ তিনি শ্রমিকদের অধিকারের কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার-রাষ্ট্র শ্রমিকদের মূল্য দেয় না। যার ফলে শ্রমিকেরা আজকে বঞ্চিত হচ্ছে। শ্রমিকেরা অধিকার হারা হচ্ছে। শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে মালিকদের দালাল শ্রমিকনেতারা। এসব দালালদের চিহ্নিত করতে হবে। আজকে শ্রমিকেরা অনাহারে-অর্ধাহারে কাজ করে। কিন্তু তাদের মানবিক মর্যাদা নেই। তাদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে না।’ শ্রম আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের প্রধান দাবি। দালালদের দিয়ে শ্রম আইন করা যাবে না। স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করেছে। স্বৈরাচার সরকার গত ১৫ বছরে শ্রমজীবী মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের স্টিম রোলার চালিয়েছে। এখন সময় এসেছে শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের। এজন্য সর্বপ্রথম শ্রমিকদের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা মহানগরীর খালিশপুর থানা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন পেশার শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে স্থানীয় বিআইডিসি সড়কে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের নিজস্ব কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন। খালিশপুর থানা সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মুজাহিদুল ইসলাম বিপ্লব এর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মহানগরী জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, মহানগরী শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এস এম মাহফুজুর রহমান ও খালিশপুর থানা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল আউয়াল। অন্যান্যের মধ্যে শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম, বদরুর রশিদ মিন্টু, নাসির উদ্দিন, মহিব্বুর রসুল, শাহনেওয়াজ রুবেল, নাসরুল্লাহ, মাসুদ শেখ, মাসুদ হাওলাদার, শামীম হোসেন, কামরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মহানগরী আমীর আরও বলেন, বর্তমান শ্রমিক সংকটের সমাধান ইসলামী শ্রমনীতি বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহিত। কারণ ইসলাম শুধু মজুরি নিশ্চিত করে না, বরং শ্রমিকের মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ নির্দেশ করে। তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত শ্রমনীতি ও শ্রম আইনগুলোর মধ্যে কিছু উন্নয়নমূলক ধারা থাকলেও বাস্তব প্রয়োগের ঘাটতি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই আইনি সুরক্ষা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ থাকে। তদারকির অভাব, শ্রম আদালতের জটিলতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং মালিকদের প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে শ্রমিকরা ন্যায্য বিচার পেতে ব্যর্থ হন। তিনি দাবি করেন, কেবল আইন প্রণয়ন নয়; সেগুলোর কঠোর প্রয়োগ, তদারকি এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে, শ্রমিকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং তাদের ধর্মীয় ও নৈতিক অধিকার সম্পর্কেও শিক্ষা দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে আজিজুল ইসলাম ফারাজী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বহু ছাত্রের পাশাপাশি অসংখ্য শ্রমিক নিহত হয়েছে। এই গণহত্যার অবশ্যই বিচার করতে হবে। যারা হুকুম দিয়েছে এবং যারা ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালিয়েছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র-জনতার রক্তের সৌধের ওপর আগামীর বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। এই রক্তকে বৃথা যেতে দেয়া যাবে না। আগামীর বাংলাদেশ পরিচালনার জন্য শ্রমিকদের প্রতিনিধি সংসদে রাখতে হবে।