চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন করে আরোপিত অযৌক্তিক ট্যারিফ বাতিল না হলে এক সপ্তাহের মধ্যে বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল শনিবার দুপুরে নেভি কনভেনশন হলে পোর্ট ইউজার্স ফোরাম আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। সভায় বক্তারা বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানির ৮৫ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। অথচ হঠাৎ করে বিভিন্ন সেবায় কয়েকগুণ ট্যারিফ বৃদ্ধি ব্যবসায়ী মহলকে চরম অনিশ্চয়তায় ফেলেছে। সাধারণ ড্রাইভারদের গেইটপাস ফি ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করা হয়েছে, যা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক আমিরুল হক অভিযোগ করে বলেন, “স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে। বন্দরের ট্যারিফ বাড়ানো হলে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।” বক্তারা আরও বলেন, কাস্টমস অফিসারদের আন্দোলন, সফটওয়্যার সমস্যার সমাধান না করেই নতুন ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে। বন্দর প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা মুনাফা করছে, লোকসানে নেই। তারপরও নানা কারসাজির মাধ্যমে অযৌক্তিকভাবে ফি বাড়ানো হয়েছে।

বিজিএমইএ’র পরিচালক এম.ডি.এম. মহিউদ্দিন বলেন, “এভাবে ট্যারিফ বাড়ানো হলে প্রথমে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, পরে প্রান্তিক জনগণও ভোগান্তিতে পড়বে।” শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নজরুল ইসলাম বলেন, “কোনো কোনো খাতে ট্যারিফ ৪৪০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে শিল্প-বাণিজ্যে অচলাবস্থা তৈরি হবে। কস্ট বেইজড ট্যারিফ প্রণয়ন করতে হবে।”

বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির সোহেল জানান, ৫৭ টাকার পাস ২৩০ টাকায় উন্নীত করায় চালক-শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ। অথচ বন্দরে চালকদের জন্য স্যানিটেশন বা খাবারের ব্যবস্থা নেই।

বাফা’র পরিচালক অমিয় শঙ্কর বর্মণ অভিযোগ করেন, বন্দর ও অফডক উভয় খাতে হঠাৎ করে ট্যারিফ বৃদ্ধি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, কোথাও কোথাও ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, “ব্যবসায়ীদের জন্য এটা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। বিদেশে ট্যারিফ কমাতে সক্ষম হলেও দেশে ট্যারিফ বৃদ্ধি ষড়যন্ত্রের অংশ মাত্র। ব্যবসায়ীরা পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে আর চুপ থাকবে না।”

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. পারভেজ আকতার, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, ডব্লিউটিসি’র সভাপতি মোহাম্মদ শফি, বিপণি বিতান ব্যবসায়ী সমিতির শারুদ নিজাম, টায়ার-টিউব আমদানিকারক সমিতির মঈনুদ্দিন আহমেদ মিন্টু, মোহাম্মদ ইয়াসিন প্রমুখ।

বক্তারা সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষণা দেন, নতুন ট্যারিফ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে নামতে ব্যবসায়ীরা বাধ্য হবেন।