খুলনা বিভাগীয় শহরের শহরতলী উপজেলা রূপসার নন্দনপুর পথের বাজার খেয়াঘাটটির সিঁড়ি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় যাত্রীদের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যে কারণে এই অঞ্চলের মানুষজন পরিবহন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আর এতে করে স্থানীয় অর্থনীতি, ব্যবসা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য জরুরি সেবার উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
স্থানীয়রা জানায়, এ এলাকার সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম আঠারোবাঁকী নদীর নন্দনপুর পথের বাজার খেয়াঘাট। খেয়াঘাটে ট্রলার দিয়ে মানুষ ওঠা-নামা করার ঢালাই কংক্রিটের সিঁড়িটি অনেক আগে ভেঙে যাওয়ার পর এটা যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য কোন রকমভাবে কাঠ বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল যা ভেঙ্গে এখন তার বেহাল দশা। যে কারণে খেয়াঘাটটি দ্রুত মেরামত ও সংস্কার করা প্রয়োজন। স্থানীয়দের দাবি, কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং জনগণের দুর্ভোগ কমানোর ব্যবস্থা করা। সরেজমিনে দেখা গেছে, খেয়াঘাটটি হতে কোনোমতে মানুষ ওঠা-নামা করছেন। প্রতিদিন সরকারি বেসরকারি-চাকুরিজীবী, ছোট বড় ব্যবসায়ী ও স্কুল কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থী সহ শত শত মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছেন। জানা যায়, নন্দরপুর সহ পাশের গ্রামের মানুষের খুলনা শহরে প্রবেশের সাশ্রয়ের মাধ্যম নন্দনপুর পথের বাজার খেয়াঘাট। এই ঘাটটি হতে ট্রলার ছাড়লে সরাসরি জেলাখানা ঘাটে নেমেই শহর। আর এ ঘাট পার হতে যাত্রীদের ভাড়া দেওয়া লাগে মাত্র ১০ টাকা। অপরদিক, বিকল্প ঘাট হিসেবে তিন কিলোমিটার দূরের আইচগাতী ইউনিয়নের সেনের বাজার ফেরিঘাট পার হয়ে শহরে প্রবেশ করতে হয়। তবে অতিরিক্ত ভ্যান ভাড়া গোনা লাগে দিনের বেলায় ৪০ থেকে ৫০ টাকা আর রাতের বেলায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। নন্দনপুর পথের বাজার ঘাট থেকে বড় বড় ব্যবসায়ী ও সরকারি চাকুরিজীবীগণ আগে পারাপার করলেও এখন তারা জীবনের ঝুঁকি এড়াতে বেছে নিয়েছেন তিন কিলোমিটার দূরের সেনের বাজার ঘাট। এদিকে শিক্ষার্থী, দিনমজুর ও ছোট ব্যবসায়ীরা অর্থ বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হয় নন্দনপুর পথের বাজার ঘাট। তবুও কেন যেন কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারি নাই। যদিও ঘাটের টলার মাঝিরা মাঝে মাঝে কাঠ বাঁশ দিয়ে খেয়াঘাট সংস্কার করে থাকেন যাত্রী হারানোর ভয়ে।
খুলনা বড় বাজারের ব্যবসায়ী নন্দনপুর এলাকার সিরাজুল ইসলাম জানান, এই এলাকার উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার যাতে এমন সমস্যা হতে মুক্তি হয়। এই পরিস্থিতি স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের দ্রুত মনোযোগ আকর্ষণ করে তিনি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। একই এলাকার আসাদুজ্জামান জানান, নন্দনপুর পথের বাজার খেয়াঘাট আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী খেয়াঘাট, এখানে আগে পালতোলা নৌকা দিয়ে যাত্রী পারাপার হত, সময়ের ব্যবধানে লগি-বৈঠার পালতোলা নৌকা হারিয়ে গেলেও এখন ইঞ্জিন চালিত ট্রলার চলাচল করে, আমরা নন্দনপুর পথেরবাজার ঘাটের স্থায়ী সমাধান চাই। এদিকে স্থানীয়রা আরো জানায়, এ এলাকার জনপ্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, ঘাটটির সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এছাড়া, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের পর খেয়াঘাটের সংযোগ সড়কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেগুলোরও সংস্কার করা হয়নি।
তারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে অতি দ্রুত চলাচলের জন্য রাস্তা ও ঘাটটির সিঁড়ি সংস্কারের কাজ করার আহবান জানান। যাতে সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। ২নং শ্রীফলতলা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জিয়াউল হক জানান, ঘাটটি মূলত সংস্কারের কাজ জেলা পরিষদ নাকি এলজিইডি করবে তেমন কোন সিদ্ধান্ত এখনো পাইনি। আর ইউনিয়ন পরিষদের স্বল্প বাজেটে সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ সম্ভব না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সমাধান করবেন বলে জানান।