কবির আহমদ, সিলেট: সিলেটের শিশুদের সাংস্কৃতিক চর্চার অন্যতম সুস্থ্য বিনোদন কেন্দ্র সিলেট শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর হলেও এখনও নেই কোন তাদের নিজস্ব ভবন। নিজস্ব ভবন না থাকায় নগরীর রিকাবীবাজারের কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের দোতলায় চারটি কক্ষে শিশু একাডেমির কোমলমতী সদস্যদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৩ সালে নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় শিল্পকলা একাডেমির পাশের ৫০ শতক জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেয়া হলেও একটি মাত্র সাইনবোর্ড ছাড়া শিশু একাডেমির কোনো চিহ্নই নেই।
শিশুদের মানসিক, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল বিকাশের লক্ষ্যে শিশু একাডেমিকে দ্রুত নিজস্ব ঠিকানায় নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়ে সিলেটের বিশিষ্টজনরা বলেন, এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ভবন পায়নি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিশুদের সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রের এই দুরবস্থাকে দুঃখজনক বলে মনে করছেন অভিভাবক ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের আগ্রহে শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল বিকাশের লক্ষ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালে সিলেটেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়।
একাডেমি সূত্র জানায়, বর্তমানে এখানে ১৮ জন প্রশিক্ষকের মাধ্যমে প্রায় ১২০০ অধিক শিশু বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের চারটি কক্ষে এর কার্যক্রম চলছে। এই চারটি কক্ষে সংকুলান না হলে কোমলমতী শিশুদের মাঝেমধ্যে কক্ষের মেঝেতে বসে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়। নির্ধারিত চারটি কক্ষ জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা, গ্রন্থাগার, অফিস ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে শিশুদের পাঠদান চলে করিডোর বা বারান্দায়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় শিশুদের চিৎকার ও হইচইয়ের মধ্য দিয়ে চলে কার্যক্রম। এতে প্রশিক্ষকরাও বিব্রত হন।
গতকাল সোমবার রিকাবীবাজারস্থ শিশু একাডেমিতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের জন্য বরাদ্দ করা একমাত্র শৌচাগার ব্যবহারের অনুপযোগী। ময়লা আবর্জনায় টয়লেটের কোমট ভরে গিয়েছে, দুর্গন্ধের কারণে শিশু ও অভিভাবকরা বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাছাড়াও গ্রন্থাগারের জায়গা সংকুচিত হওয়ায় অনেক বই পড়ে আছে গুদামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
সিলেট জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালে সিলেট নগরীর পূর্ব শাহী ঈদগাহ এলাকায় সিলেট বিভাগীয় শিশু একাডেমি কমপ্লেক্সের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ৫০ শতক জমি স্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরপর একাধিকবার লিখিত ও মৌখিকভাবে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
নগরীর চালিবন্দর থেকে মেয়ে লুবণা আক্তারকে প্রশিক্ষণে নিয়ে এসেছেন আব্দুল হক। তিনি জানান, তাদের প্রতিদিনের কষ্টের কথা। বিভাগীয় শহরে শিশু একাডেমি নিজস্ব কোন ভবন নেই তা খুবই কষ্টের, খুবই বেদনার। তিনি জানান আমার মত অনেক অভিবাবক শিশুদের নিয়ে সুস্থ্য সংস্কৃতি চর্চার জন্য এখানে আসেন। তিনি দুঃখ করে বলেন শিশুরা যে জায়গায় বসার জায়গা নেই অভিভাবকরা বসবে কোথায়? এর মধ্যে সেনিটেশনের খুবই সমস্যা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিশু একাডেমির এক প্রশিক্ষক বলেন, ‘২০১৩ সালে পূর্ব শাহী ঈদগাহের জেলা শিল্পকলা একাডেমির পাশেই সিলেট শিশু একাডেমি করার কথা ছিল। জায়গাও দেয়া হয়েছিল ৫০ শতক। কিন্তু বিগত সময়ে মন্ত্রনালয় এ বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। বার বার বলার পরেও অদৃশ্য কারণে ভবণ নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ভূঞা জানান, বিষয়টা এমন হয়ে গিয়েছে, আমরা দুই ধাপ এগুতে গেলে কিন্তু তিন হাত পিছিয়ে যাই। অনেকবার মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানালেও তারা কোন উদ্যোগি নেননি। মন্ত্রী এমপি সচিব সবার কাছেই গিয়েছি, এ ব্যাপারে চিঠিও লিখেছি, কিন্তু কোন কাজে আসেনি। শিশু একডেমি নিয়ে যেন এই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কোন আগ্রহ নেই। তিনি আরও বলেন, তবে আশা খবর হচ্ছে নিজস্ব ভবনের কাজ শুরু হওয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। এটির মাধ্যমে সিলেট সহ ১৭ টি শিশু একাডেমির ভবন নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে সিলেটে আমাদের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জায়গার ডিজিটাল সার্ভে শেষ হয়েছে। অচিরেই কাজ শুরু হবে বলে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।