সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থের অপচয়, রাষ্ট্রবিরোধী চুক্তি সম্পাদন এবং অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম অনুসন্ধান শুরুর বিষয়টি জানিয়েছেন।

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত রোববার এ অভিযোগ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপপরিচালক সোহানুর রহমানকে।

দুদকের হাতে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৮২ ব্যাচের পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা শহীদুল হক চাকরিতে যোগদানের ৪-৫ বছর পর লিয়েনে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থায় (আইওএম) যোগ দিয়ে বিদেশে চলে যান। সে সময় তিনি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব। পরে তিনি প্রায় ১৫-১৬ বছর আইওএম-এ চাকরি করেন। আন্তর্জাতিক সংস্থায় এভাবে চাকরি করা বিধিসম্মত না হওয়ায় সরকার তাকে অব্যাহতি দেয়।

দীর্ঘ সময় জেনিভায় আইওএম কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৪ সালের শুরুতে চাকরি ফিরে পেতে তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আবেদন করেন। দুই জন হাই কমিশনার তাতে মধ্যস্থতা করেন। পাশাপাশি তৎকালীন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সুপারিশে তাকে ফের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হয় বলে দুদকের নথিতে লেখা হয়েছে।

২০১৪ সালে দেশে ফেরার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তাকে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে পরপর পদোন্নতি দিয়ে পররাষ্ট্র সচিব করা হয়, যা নিয়মবহির্ভূত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে নথিতে। সেখানে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে সাত বছর দায়িত্ব পালনকালে শহীদুল হক আন্তর্জাতিক মহলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকা-ের বৈধতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনার আয়োজনের নামে কোটি কোটি টাকা সরকারি অর্থের অপচয় এবং নানা অনিয়মের মাধ্যমে সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নথিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে নীতিগত ব্যর্থতার জন্যও তাকে দায়ী মনে করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশ ভ্রমণ ও সেমিনারে অংশগ্রহণের নামে বিপুল সরকারি অর্থ ব্যয় তার আমলে নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। এছাড়া তিনি আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি গ্রুপ তৈরি করেন, যা সাধারণ কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতি ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।

পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্বের শেষ দিকে আইওএম-এর ডেপুটি মহাপরিচালক পদে প্রার্থী হতে সরকারের সমর্থন পান শহীদুল হক। নির্বাচনী প্রচারে বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করেন। অভিযোগ রয়েছে, সে সময় তিনি আইওএম ঢাকা অফিসকে বিশেষ সুবিধা দেন। এছাড়া শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিদেশি স্ত্রীকে আইওএম-এ চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও তার সুপারিশ ছিল বলে লেখা হয়েছে দুদকের নথিতে।