একেএম আবদুর রহীম ফেনী : বল্লামুখার বাঁধ। বাংলাদেশ - ভারত সীমান্তের শূন্য রেখায় মূহুরী নদীর নিজ কালিকাপুর থেকে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে পশ্চিম দিকে বয়ে গেছে বল্লামুখার খাল। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এটি। প্রায় ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ খালটি ফেনীর মানুষের কাছে ছিল অচেনা একটি নাম।
২০২৪ সালের ২০ আগস্ট রাতে প্রলয়ংকরী বন্যায় বল্লামুখা খালের বাঁধটির বাংলাদেশ অংশে প্রায় ১৪শ মিটার ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।শুরুতে ভারতীয় বিএসএফ বল্লামুখা বাঁধটি কেটে দিয়ে বাংলাদেশের উপর বিপর্যয়কর বন্যা চাপিয়ে দেয়।ভারতের পাহাড়ি ঢল ও ত্রিপুরা রাজ্যের পানিতে পরশুরামের বিস্তীর্ণ এলাকা ১০ - ১৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পার্শ্ববর্তী ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া,ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলা সহ সমগ্র ফেনী জেলা।
গণমাধ্যমে প্রচারের কারণে জাতীয়ভাবে পরিচিতি পায় বল্লামুখা। পানি সম্পদ উপদেষ্টা, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিগন এই বাঁধ পরিদর্শন করেন। তবে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর ডাঃ সফিকুর রহমান বল্লামুখা বাঁধ পরিদর্শন করেন।অবশ্য তিনিই একমাত্র শীর্ষ জাতীয় নেতা যিনি বন্যার প্রথম দিকেও একবার একবুক পানি ডিঙ্গিয়ে দূর্গত এলাকায় গিয়ে স্বচক্ষে মানুষের দুঃখ কষ্ট প্রত্যক্ষ করেন এবং তাদের হাতে ত্রান সামগ্রী তুলে দেন।
৩রা ফেব্রুয়ারী আমীরে জামায়াত ডাঃ সফিকুর রহমান ফেনীর পরশুরাম উপজেলা সীমান্তে নিজকালিকাপুর গ্রামস্থ বল্লামুখা বাঁধ পরিদর্শন করে উপস্থিত সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিএসএফ কর্তৃক বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে দিয়ে বাংলাদেশের উপর ভয়াবহ বন্যা চাপিয়ে দেয়ার নিন্দা জানান।তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনতি বিলম্বে এই বাঁধ টেকসই ভাবে মেরামতের জোর দাবী জানান। পরবর্তীতে বিজিবি এবং পাউবো’র সহায়তায় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে এই বাঁধ পূননির্মান সম্পন্ন হয়।অবশ্য বিএসএফ বারবার বাধা দিয়েছে।তারা কিছুতেই বাঁধ মেরামত করতে দিবেনা।আর আমাদের দেশপ্রেমিক বিজিবি এবং এলাকাবাসী দেশের স্বার্থে বাঁধ মেরামত করবেই।শেষ পর্যন্ত দেশপ্রেমের জয় হয়েছে তথা বাংলাদেশের জয় হয়েছে।
এ বাঁধটি পরশুরামের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি উপলব্ধি করেন মানুষ। পরশুরামের মানুষ শুরু থেকেই এ বাঁধটি নির্মাণে সোচ্চার ছিলেন।
উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিজিবি ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সরাসরি বল্লামুখার বেড়িবাঁধ নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। নানা বাধা-বিপত্তি ও জল্পনা- কল্পনার পর দৃশ্যমান হয়েছে বল্লামুখার বেড়িবাঁধ।
ভারতের শুরু থেকে মনোভাব ছিল বাংলাদেশকে বাঁধ তৈরি করতে দিবেনা, তারাও বাঁধ তৈরি করবে না। কিন্তু বাংলাদেশ অংশে বাঁধ দৃশ্যমান হওয়ার পর ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরার মানুষ অপর অংশে বাঁধ নির্মাণের জন্য জোরালো দাবী তোলে। এরপরই ভারতের অংশে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়।