রাজধানীর কাপ্তান বাজার হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট দোকান মালিক সমিতির ৬শত ৪২ জন সদস্যের নামে দোকান বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। ওই মার্কেটটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি)। উচ্চ আদালত থেকে সমিতির সদস্যদের নামে দোকান বরাদ্দ দিয়ে সালামীর টাকা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলেও ডিএসসিসি এ ব্যপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যে কারণে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিএসসিসির প্রশাসকের কাছে সমিতির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আবেদন করা হয়েছে।

দোকান মালিক সম্প্রতি সমিতির পক্ষে মো. শহীদুল্লাহ ও মনছুরুল হকের লিখিত আবেদনে ডিএসসিসির প্রশাসকের কাছে বলা হয়, বিগত ২৬/১১/২০১৪ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগ হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মার্কেট দোকান মালিক সমিতি’র ৬৪২ জন সদস্যের কোন তালিকা সঠিক তা নির্ণয় করে আইন অনুযায়ী নিস্পত্তি করার নির্দেশনা প্রদান করে। পরবর্তীতে সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে নির্দেশনা প্রদান করেন। উক্ত নির্দেশনার আলোকে বিগত ১৫/০৫/২০১৫ শ্রম প্রতিমন্ত্রী বরাবর সঠিক তালিকা ও কমিটি নির্ণয় করে অনুমোদনের জন্য আবেদন করলে শ্রম প্রতিমন্ত্রী তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎকালীন যুগ্ম শ্রম পরিচালককে নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে যুগ্ম শ্রম পরিচালক ৩টি গ্রুপের মধ্যে তদন্ত করে বিগত ২৫/১০/২০১৫ কার্যকরী কমিটি এবং বিগত ১২/১১/২০১৫ তারিখে ৬৪২ জন সদস্যের তালিকা অনুমোদন করেন। উক্ত তালিকা ও কমিটি অনুমোদনের পর বিগত ২৩/১১/২০১৫ তৎকালীন মেয়র বরাবর হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে অনুমোদনকৃত ৬৪২ জন সদস্য তালিকা ও কমিটি অনুযায়ী দোকান বরাদ্দ দেয়ার আবেদন করা হলে মেয়র সমিতির নামে বরাদ্দ না দিয়ে জনৈক আবুল কাশেমের নামে বরাদ্দ প্রক্রিয়া আরম্ভ করে। এ অবস্থায় ঢাকা জেলা সিনিয়র ৬ষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে সিটি কর্পোরেশনকে বিবাদী করে মামলা করা হয়। আদালত শুনানী মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দোকান বরাদ্দের উপর স্থিতিবস্থার’ আদেশ প্রদান করেন । পরবর্তীতে মামলা বিভিন্ন তারিখে, শুনানি করে সাক্ষী প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করে।

লিখিত আবেদনে আরও বলা হয়, আমরা বাদীপক্ষের সাক্ষী/জেরা শেষ হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বাদীর আরজিতে দাবীকৃত বিভিন্ন চিঠিপত্র আদান প্রদান ও বাদী সমিতির অনুকুলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অত্র মামলাতে স¦ীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে । এমনি পরিস্থিতিতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় জনৈক আবুল কাশেম মামলায় হাইকোর্ট ও সুপ্রীম কোর্টের আদেশগুলো সংযুক্তি করে তার পক্ষে রায় দিয়েছে বলে পক্ষভূক্তির আবেদন করেন। উক্ত আবেদন দু’তরফা শুনানি শেষে বিগত ০৪/০৮/২০১৬ তারিখে ৬ষ্ঠ সহকারী জজ আদালত খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে আবুল কাশেম উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ কোর্টে সিভিল রিভিশন ১৮৯/২০১৬ মামলা দায়ের করলে গত ৩০/০১/২০১৭ তারিখে আদালত তা খারিজ করে দেয় । জেলা জজ কোর্টের সিভিল রিভিশন ১৮৯/২০১৬ মামলার আদেশের বিরুদ্ধে আবুল কাশেম হাইকোর্ট বিভাগে সিভিল রিভিশন ৪৬৫/২০১৭ আপিল দায়ের করলে গত ০৭/১২/২০১৭ তারিখে হাইকোর্ট বিভাগ তার আপিল খারিজ করে দেয়। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আবুল কাশেম সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে লীভ টু আপীলনং ১৫৩০/২০১৮ দায়ের করলে আপিল বিভাগ গত ০৮/০৭/২০১৯ তারিখে লীভ টু আপীল ডিসমিস করে দেয়। এরপরও আপিল বিভাগ খারিজ করে দেয়ার পর এবং আদালতের স্থিতিবস্থা বহাল থাকাবস্থায় সিটি কর্পোরেশন গত ১৩/০৬/২০১৯ তারিখে তার পক্ষে বরাদ্দপত্র ইস্যু করে। এ অবস্থায় আদালত অবমাননার কারণে ভায়োলেশন মিস মোকদ্দমা নং-০৭/২০১৯ দায়ের করলে আদালত তা গ্রহণ করে সিটি কর্পোরেশনকে শোকজ নোটিশ প্রদান করে। সিটি কর্পোরেশন আদালতের শোকজ নোটিশ প্রাপ্তির পর দোকান বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের পর মেয়র তাপস এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফীর যোগসাজসে গত ১৩/০৬/২০২১ তারিখে আবারও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় বরাদ্দপত্র ইস্যু করলে হাইকোর্ট বিভাগে পরবর্তীতে সিভিল অর্ডার দায়ের করা হলে আদালত উক্ত বরাদ্দ চিঠি স্থগিত করে দেয় । এরপর গত ২৬/০৪/২০২২ তারিখে আদালত দেওয়ানী মোকদ্দমা নং-৬৪/২০১৬ এর দু’তরফা শুনানী শেষে রায় এবং ২৮/০৪/২০২২ তারিখে ডিক্রি প্রদান করে । এরপরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সমিতির বৈধ ৬৪২ জন সদস্যের তালিকা মোতাবেক দোকান বরাদ্দ না দিয়ে পছন্দনীয় অবৈধ ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়া করতে দেওয়ানী আপিল নং-৩৮৬/২০২২ দায়ের করে। দেওয়ানী আপিল নং-৩৮৬/২০২২ইং বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ২৩/০৪/২০২৪ তারিখে আবারও তৃতীয় দফায় আরেকটি বরাদ্দপত্র ইস্যু করে অবৈধ লোকদের কাছ থেকে সালামীর টাকা জমা নেয়া আরম্ভ করে। এ অবস্থায় ২৩/০৪/২০২৪ তারিখের পত্রের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে আদালতে আবেদন করলে আদালত তা স্থগিত করে দেয়। সর্বশেষ গত ০১/১০/২০২৪ তারিখে ২য় অতিঃ জেলা জজ আদালত দেওয়ানী আপিল নং-৩৮৬/২০২২ইং মামলা দু’তরফা শুনানী শেষে তা খারিজ করে দেওয়ানী মোকদ্দমা নং-৬৪/২০১৬ এর রায় বহাল রাখে। অথচ দেওয়ানী আপিল নং-৩৮৬/২০২২ এর খারিজের আদেশ বাস্তবায়ন করা হয়নি আজও। তাই দেওয়ানী মোকদ্দমা নং-৬৪/২০১৬ এর শনাক্তকৃত ৬৪২ জন সদস্যের অনুকূলে বরাদ্দ পত্র ইস্যু করে সালামীর টাকা গ্রহণ করার অনুরোধ জানানো হয় ওই আবেদনে।