গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় সাময়িক বরখাস্ত করা ১৩৯ জন শ্রমিককে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বরখাস্তকৃত শ্রমিকরা। এ সময় কাজ বন্ধ রেখে কারখানার কর্মরত শ্রমিকদের একটি অংশ আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভে যোগ দেন। বুধবার কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ এলাকায় অবস্থিত পি.এন. কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গত ১১ ডিসেম্বর কারখানায় কর্মবিরতি পালন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ তুলে কর্তৃপক্ষ ১৩৯ জন শ্রমিককে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। পরবর্তীতে টঙ্গীর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় শ্রম আইন ২০০৬-এর ২৬ ধারা অনুযায়ী বরখাস্ত শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশ পে বাবদ ৩০ দিনের বেসিক বেতন, সার্ভিস বেনিফিট, এক মাসের বেসিকসহ অন্যান্য ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত জানায়।

তবে বরখাস্তকৃত শ্রমিকরা এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে বুধবার সকালে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় কারখানার ভেতরে কর্মরত বেশ কিছু শ্রমিক উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রেখে আন্দোলনে যোগ দেন। তারা বরখাস্ত শ্রমিকদের পুনর্বহাল অথবা শ্রম আইন অনুযায়ী সকল পাওনা দ্রুত পরিশোধের দাবি জানান। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ে পাওনা পরিশোধ সম্ভব না হলে সব শ্রমিককে কারখানা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইন অনুযায়ী পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার দাবিও তোলেন তারা।

খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে। বিক্ষোভ চলাকালে কারখানার প্রধান ফটক এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করলেও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ক্রয়াদেশ সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং চরম আর্থিক সংকটের কারণে গাজীপুরের মুকুল নীটওয়্যার লিমিটেড কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার থেকে কারখানাটি স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে বলে জানানো হয়।

কারখানা কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মইনুল ইসলাম মকুল। আবেদনে বলা হয়, বর্তমান আর্থিক বাস্তবতায় কারখানার স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা আর সম্ভব নয়।

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোনাবাড়ী থানাধীন আমবাগ সড়কের নীল নগর এলাকায় অবস্থিত মুকুল নীটওয়্যার লিমিটেড কারখানাটি বুধবার সকাল থেকে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। কাজে যোগ দিতে এসে কারখানার প্রধান ফটকে স্থায়ীভাবে বন্ধের নোটিশ দেখতে পেয়ে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করে নিয়ন্ত্রণে আনে।

কারখানার পরিচালক মইনুল ইসলাম মকুল তার লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাক রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, অর্ডার সংকট, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি এবং তীব্র আর্থিক ঘাটতির কারণে কারখানার কার্যক্রম চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ (কোনাবাড়ী জোন)-এর পরিদর্শক, মোর্শেদ জামান জানান, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।