টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শুরু হয়েছে তাবলীগ জামাত বাংলাদেশ শুরায়ী নেজামের আয়োজনে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা। শুক্রবার ফজরের পর আম বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় এ জোড় ইজতেমা। আগামী মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) আখেরি মুনাজাতের মধ্য দিয়ে এ জোড় ইজতেমা শেষ হবে। শুক্রবার পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানে আগত দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় ১৭টি দেশের ৪৩৬ জন বিদেশি মেহমান জোড় ইজতেমায় অংশ নিতে ময়দানে এসেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের শুরায়ী নেজামের গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।
গণমাধ্যম সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, বিশ্ব ইজতেমার ৪০ দিন পূর্বে মূলত: জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পাঁচদিনের জোড় তাবলীগ জামায়াতের সোনালি ঐতিহ্য। দাওয়াতের কাজের চেতনার স্পন্দন জাগানো একটি বিশেষ আয়োজন। এখান থেকেই সারা বছরের কাজের সঠিক নকশা ও দিকনির্দেশনা নির্ধারিত হয়। দাঈদের আমল, দাওয়াত, তরতিব এবং দেশের প্রেক্ষাপটে করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান উপস্থাপন করেন বড়রা। যা একজন সাথীর দুনিয়া ও আখেরাতের জিন্দেগি পরিচালনায় দিশা দেয়। জোড় ইজতেমা সফল করার লক্ষ্যে ময়দানের উত্তর পাশে বিশাল ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অবস্থান নিয়েছেন। ৫ দিন তারা সেখানে অবস্থান করবেন।
তিনি আরও জানান, জোড় ইজতেমায় কেবল ৩ চিল্লা বা তদূর্ধ্ব সময় লাগানো সাথী ও কমপক্ষে ১ চিল্লা সময় লাগানো দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা অংশ নিতে পারেন। এতে জোড়ের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও গুরুত্ব বজায় থাকে।
হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, শুক্রবার বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে বৃহত্তর জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জুমার জামাতে ইমামতি করেন ইজতেমার বাংলাদেশের শীর্ষ মুরুব্বি হাফেজ মাওলানা জোবায়ের। জোড় ইজতেমার প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার বাদ ফজর সম্মিলিত মুসল্লিদের উদ্দেশে আম (সার্বিক) বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা ওমর ফারুক। কারগুজারি করেন দিল্লির মাওলানা আব্দুর রহমান। বাদ জুমা বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা ফারুক, বাদ আছর পাকিস্তানের মাওলানা আহমদ বাটলা, বাদ মাগরিব দিল্লির মাওলানা আব্দুর রহমান বয়ান করেন।
আয়োজকরা জানান, শুরায়ে নেজামের পাঁচ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমার প্রথম দিনে দেশের চিল্লাধারী মুসল্লি ছাড়াও বিশ্বের প্রায় ১৭টি দেশের ৪৩৬ জন বিদেশি মেহমান ময়দানে এসেছেন। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে ৩০৮ জন, ভারত থেকে ৭০ জন, কিরগিজিস্তান থেকে ১০ জন, কানাডা থেকে ৯ জন, মিয়ানমার থেকে ৩ জন, ইয়েমেন থেকে ৪ জন, চীন থেকে ১ জন, সৌদি আরব থেকে ৬ জন, তিউনিসিয়া থেকে ১ জন, যুক্তরাজ্য থেকে ৭ জন, ইটালি থেকে ২ জন, নাইজার থেকে ১ জন, আফগানিস্তান থেকে ৬ জন, আমেরিকা থেকে ১ জন, জার্মানি থেকে ১ জন ও জাপান থেকে একজন মুসল্লি এসে ময়দানে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।
হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে শুক্রবার পর্যন্ত চলমান ৫ দিনের জোড় ইজতেমায় আগত দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন চাঁন মিয়া (৬০)। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার বগারপাড় এলাকার মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে। চাকরির সুবাদে তিনি নারায়ণগঞ্জের রঘুনাথপুর এলাকায় ভাড়া থাকতেন।
এর আগে ভোররাতে ইজতেমা ময়দানে ৮০ নং খিত্তায় ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান মো: নুর আলম (৮০) নামের এক মুসল্লি। তিনি নোয়াখালী জেলা সদর উপজেলার আন্ডার চর কাজীর তালুক গ্রামের সুলতান আহমাদের ছেলে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইজতেমা ময়দানে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।