মাহমুদ শরীফ, কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা : জেলার কুমারখালীতে খালের মুখে বাঁধ দিয়ে মাছচাষ করায় বৃষ্টির পানিতে ডুবছে কৃষকের স্বপ্ন। ভারী বৃষ্টিতে ৩৪০ হেক্টর আমন ধান ক্ষেত ইতিমধ্যেই তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে কয়েকটি পুকুরও। অন্যদিকে খালের বিভিন্ন স্থানে কাঁচাপাকা অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ছোট ছোট পাইপ কালভার্ট নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। এতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যহত হচ্ছে।

উপজেলার গড়ের মাঠ সেতু থেকে বানিয়াকান্দি, মালিয়াট, মট মালিয়াট, করাতকান্দি হয়ে মোড়াগাছা পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার খালের দুই পাশে কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। কৃষকরা চলতি মৌসুমে আমন ধানের চাষাবাদ করেছেন। এই খাল দিয়ে মাঠের অতিরিক্ত পানি গড়াই নদীতে গিয়ে পড়ে। অথচ ১০/১২ বছর ধরে সেতুর মুখে বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ করছেন জগন্নাথপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পলাশ হোসেন সুজন। বিলের জমা হওয়া বৃষ্টির পানি নদীতে না যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলকার কৃষক।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গড়ের মাঠ সেতুর মুখে মাটি ও জাল দিয়ে বাঁধ দেওয়া। খালে জন্মেছে বড় বড় কচুরিপানা। কয়েক‘শ মিটার পর পর ছোট বড় কালভার্ট ও পাইপ কালভার্ট। খাল বন্ধ করে নির্মাণ করা হয়েছে বেশকিছু কাঁচা ও পাকা বাড়ি। খাল ভরা পানি থাকলেও প্রবাহ নেই। খালের দুইপাশে জমিতে আমন ধানের চারা পানিতে ডুবুডুবু করছে। ভেসে গেছে বেশকিছু মাছের পুকুরও। খাল দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও মাছ চাষ করায় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে ধান ডুবে গেছে। চারাগুলো পঁচে যাচ্ছে। চারা ডুবে পঁচে যাওয়ায় মাথায় হাত উঠেছে ধান চাষীদের।

মালিয়াট গ্রামের কৃষক মনছের আলী বলেন, এই খাল দিয়েই বৃষ্টির জমা বিলের পানি নদীতে চলে যেত। এখন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। এই কৃষকের তিনবিঘাসহ অন্তত তিন হাজার বিঘা জমির ধান ডুবে গেছে। মট মালিয়াট মাঠে দুই বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপন করেছেন কৃষক রিন্টু শেখ। তিনি বলেন, খাল দখল করে কেউ মাছ চাষ করছে, কেউ বাড়ি বানাচ্ছে। তার পানি বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে মাঠের ফসল ডুবে গেছে। তিনি দুই বিঘা জমিতে ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ৬বিঘা জমির ধান ডুবে সাদা হয়েছে।

শিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, গড়ের মাঠে আড়াই কোটি টাকার সেতুর নির্মাণ করেছে সরকার। কিন্তু স্থানীয়রা বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়।

মাছ চাষি পলাশ হোসেন সুজন বলেন, গড়ের মাঠে সেতুর কোনো প্রয়োজন নেই। ব্যক্তিগত জমিতেই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছি। এতে পানি প্রবাহে কোনো সমস্যা নেই। অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবি ইউসুফ আলী বলেন, ব্যক্তিগত জমিতেই বাড়ি নির্মাণ করছি। সরকার মেপে সরকারী জমিতে খাল খনন করুক।

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। খুব দ্রুত জমি পরিমাপ করে খাল খননের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম এব্যাপারে বলেন, পানি অপসারণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পানির স্বাভাবিক পথ না থাকায় ভারি বৃষ্টিতে ৩৪০ হেক্টর আমন ধান প্লাবিত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির কারণে আগাম জাতের সবজী, মুলা, ঢেড়স, ঝিঙে ও মরিচের ক্ষতি হচ্ছে।