টিনের চালা আর কাদামাখা উঠোনের ঘরে বেড়ে ওঠা এক তরুণ এখন দাঁড়িয়ে আছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়ায়। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাগচালা গ্রামের সন্তান ইকরামুল হাসান শাকিল জয় করেছেন মাউন্ট এভারেস্ট, গড়েছেন ‘সি টু সামিট পদযাত্রায় ইতিহাস।
মাত্র ৯০ দিনে কক্সবাজারের ইনানী সৈকত থেকে হেঁটে ১ হাজার ৩৭২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল হয়ে তিনি উঠেছেন ২৯ হাজার ৩১ ফুট উচ্চতার এভারেস্টের চূড়ায়। এই খবরে এলাকায় বইছে আনন্দের বন্যা। অশ্রুসিক্ত চোখে ছেলে শাকিলের কৃতিত্বের কথা বলছেন মা শিরিনা বেগম।
তিনি বলেন, “আমার ছেলের সঙ্গে শেষবার কথা হয় গত ১৬ তারিখ শুক্রবার রাতে। ও বলল, ‘মা, আমি পাহাড়ের ওপর দিকে যাচ্ছি, তোমরা চিন্তা করোনা। তারপর আর কোনো খোঁজ পাইনি। খুব টেনশনে ছিলাম, ঘুম হয়নি, খাওয়া হয়নি। মোবাইলেও পাচ্ছি না। পরে নেপাল থেকে কেউ একজন ফোন করে আমার ছোট ছেলে সজিবকে জানায়, শাকিল নাকি চূড়ায় উঠেছে। তখন থেকেই বুক ভরে কান্না আসছে—এ আনন্দের কান্না, গর্বের কান্না।
শাকিলের বাবা খবির উদ্দিনের মৃত্যু হয় ২০১৯ সালে। তারপর সংসারের হাল ধরেন মা শিরিনা। বড় ছেলে শাকিলের পাশাপাশি দুই ভাই সজিব ও সাকিব মিলে লড়াই করে টিকিয়ে রেখেছেন সংসার। সজিব চাষাবাদ করেন আর সাকিব স্থানীয় একটি কারখানার শ্রমিক।
শাকিলের শৈশব কেটেছে বাগচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, এরপর জনতা উচ্চ বিদ্যালয় ও পিয়ার আলী কলেজে। সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ ও ভ্রমণ বিষয়ক ছয়টি বই লিখেছেন তিনি।
গ্রামবাসী জানান, শাকিল ছিল মেধাবী, স্বপ্নবান ও পরিশ্রমী। কেউ কল্পনাও করেনি, এই গ্রামের ভাঙা ঘরের ছেলে একদিন বিশ্ববাসীর নজরে আসবে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “শাকিল যে একদিন এভারেস্টে উঠবে, সেটা কেউ কল্পনা করিনি। আজ সে আমাদের বাগচালাকে গর্বিত করেছে। বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছে বিশ্বের ছাদে।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ বলেন, “শাকিলের সাফল্যে আমরা গর্বিত। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তার এই অর্জন এলাকার তরুণদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করবে।
শাকিলের এ ঐতিহাসিক অভিযানের আয়োজন করেছে বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। স্পন্সর করেছে প্রাণ গ্রুপ, ইউএনডিপি, মিস্টার নুডলস, সিস্টেমা টুথব্রাশ, মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল, নিউজ পার্টনার জাগো নিউজ এবং রেডিও পার্টনার জাগো এফএম।
ইকরামুল শাকিল এখন শুধু একজন পর্বতজয়ী নন, তিনি হয়ে উঠেছেন সংকটে লড়াই করে স্বপ্ন পূরণের জীবন্ত প্রতীক। তার গল্প আজ দেশের হাজারো তরুণকে শিখাচ্ছে—শুরুটা যতই ছোট হোক, সাহস আর সংগ্রামে জয় অনিবার্য।