সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যে সংবিধান বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিভাজিত করেছে। সেই সংবিধানের পরিবর্তন করে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান এবং ব্রিটিশ বিরোধী ১৯৪৭ সালের জন আকাঙ্খার কথা থাকবে। গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের মুক্তির সোপানে এক পথসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, যারা গণহত্যা চালিয়ে আমার ভাইদের হত্যা করেছে। তাদের বিচার না করে নির্বাচন নয়। বিচার ও সংস্কারের পরেই নির্বাচন। এনসিপির এই নেতা সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, এই শিল্প আপনার আমার গর্ব হতে পারতো। কিন্তু আমরা সেটা সারাবিশ্বে তুলে ধরতে পারিনি। আমরা চাই আগামীর বাংলাদেশে সিরাজগঞ্জের শিল্প ও ঐতিহ্য পুরো বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর বুকে তুলে ধরবো। এ জেলার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সুচিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা হবে। আপনাদের বিচার করতে হবে কারা ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে লড়েছে। কারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করেছ। যে ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে। সেই জায়গায় অন্যরা বসার ব্যবস্থা করতে চাইছে। আপনেরা বিচার বিশ্লেষণ করে সমর্থন করুন। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত সিরাজগঞ্জ গড়ে তুলুন। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর নিরপেক্ষ প্রশাসন, পুলিশ ও আদালত চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা দেখছি প্রশাসনে যারা রয়েছেন তারা একটি দলের হয়ে কাজ করছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কারের বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, শহীদ পরিবার যারা আছে তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। শুধু এই সরকার না, যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক, এটা করতে হবে। এটার জন্য আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলছি। যে জুলাই ঘোষণাপত্রে এই শহীদদের কথা থাকবে, এই পরিবারগুলোর কথা থাকবে এবং সেটা সংবিধানে যুক্ত করা হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের কী কী সংস্কার লাগবে সেই কথা থাকবে। আমরা এই দুটি দাবিতে সারা দেশে পদযাত্রা করছি।

আমারা শুনতে পেরেছি, সিরাজগঞ্জ প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। জুলাই গণঅভ্যুথানের দাবি, নিরপেক্ষ প্রশাসন, নিরপেক্ষ পুলিশ ও নিরপেক্ষ আদালত।

এসময় সিরাজগঞ্জ প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আপনারা নির্দিষ্ট কোনো দলের হয়ে কাজ করবেন না। এই পথসভার পর জুলাই আন্দোলনের শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা।

মেহেরপুর জেলা সংবাদদাতা : মেহেরপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উদ্যোগে ঐতিহাসিক জুলাই পদযাত্রা মেহেরপুর গাংনী, মুজিবনগর অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে গতকাল মঙ্গলবার সাড়ে ৫ টার সময় অনুষ্ঠিত হয়। মেহেরপুরসহ গাংনী ও মুজিবনগর এলাকাজুড়ে শত শত মানুষ ছাত্র-জনতার এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। কুষ্টিয়া অনুষ্ঠান শেষ করে মেহেরপুর জেলা গাংনী উপজেলা বৈকাল সাড়ে ৫ টার সময় পদযাত্রা শুরু হয়ে। গাংনী উপজেলা পদযাত্রাটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষ সংক্ষিপ্ত পথসভা করেন। মেহেরপুর শহরের ওয়াপদা মোড় সেখান থেকে পদযাত্রা শহীদ শামসুজোহা নগর উদ্যানে গিয়ে শেষ পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পেশ করেন । জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম। জুলাই পদযাত্রাকে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাকর্মীরা। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

বলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা সেটা মেহেরপুর,। মেহেরপুর বাসীকে জানিয় দিতে চাই জাতীয় নাগরিক পার্টি বাংলাদেশের দুর্নীতিমুক্ত ফ্যাসিবাদ মুক্ত এবং সরকার উপহার দেবো আমরা। আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন আগামী নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ ঘোষণা করতে হবে এবং শহীদের পরিবারদের সুব্যবস্থা করতে হবে, গত ফাঁসিস্ট দোসরদের বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে, নইলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর বাংলার জনগণ মেনে নেবে না। দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি। কিন্তু বিগত হাসিনা সরকারের মতো পাতানো নির্বাচন মেনে নেবে না বাংলাদেশের মানুষ। উত্তর অঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস সাংবাদিকদের বলেন আমার দেশের মানুষ সরল সোজা, যেভাবে বোঝাবেন সেভাবে বোঝে এই মানুষগুলো কিন্তু গত স্বৈরাচার সরকার এদেশের মানুষের উপরে অত্যাচার, জুলুম, কথা না শুনলেই, গুম, খুন করেছেন। স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনা তার পেটুয়া বাহিনী দিয়ে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এবং ইসলাম প্রিয় মানুষের ওপর প্রকাশ্যে অত্যাচার জুলুমের স্টিম রোলার চালিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে গ্রামের মানুষগুলোকে বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে এসে বিভিন্ন কেসে ফেলে দেয়ার নাম করে হাজার হাজার টাকা লুটপাট করেছে। তাই আমরা বলতে চাই জুলাইয়ের শহীদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দেব না। সরকার মানুষের ভাষা বুঝবে বিনা ভোটে আর কাউকে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। মেহেরপুরবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন দলকে নির্বাচনে বিজয় করবেন বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি মেহেনতি মানুষের পাশে থাকবে। যে কোন সংকটের মুখে তারুণ্যের বিজয় হয়েছে। এ সময় মেহেরপুর, গাংনী, মুজিবনগর উপজেলার জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা কর্মীরা, সহ সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করলেন এনসিপি নেতৃবৃন্দ

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতারা। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিল আবরার ফাহাদ। ৮জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গায় গ্রামের গোরস্থানে আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন তারা। এরপর নেতৃবৃন্দ আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ ও মা রোকেয়া খাতুনের সঙ্গেও কথা বলেন।

জনতার অধিকার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার এবং নতুন সংবিধানের দাবিতে দেশব্যাপী ‘জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পথসভা ও পদযাত্রা করেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতারা।

কবর জিয়ারত শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় নাহিদ বলেন, শহীদ আবরার ফাহাদের দেখানো পথেই গনঅভ্যুত্থান হয়েছে। ্এরপর জেলা শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে এক সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বিকেলে ভেড়ামারা মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলায় পদযাত্রায় অংশ নেন। এর আগে তারা সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৫৫মিনিটে কুষ্টিয়া শহরে পৌঁছান এবং অভিজাত আবাসিক হোটেলে রাত্রিযাপন করেন। সোমবার রাত ১০টায় তারা পাবনায় পথসভা ও পদযাত্রা করেন। সেখানে এ কর্মসূচি শেষ করে কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব, আবু সাঈদ লিয়ন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী এবং কেন্দ্রীয় সদস্য ফিহাদুর রহমান দিবস প্রমুখ।

এছাড়া এনসিপির অঙ্গ সংগঠন যুব শক্তি ও শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং কুষ্টিয়া জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন। বৃষ্টি বিঘিœত পদযাত্রা কর্মসূচি পালনকালে সড়কে দলীয় তরুন নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।