ডাকসু চাকসু রাকসুর ভিপিদের অংশগ্রহণ

ইবরাহীম খলিল ও মো. আশরাফুল আলম সিদ্দিকী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে : চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা সরকারি কলেজের মাঠে গতকাল শনিবারের বিকেলটা ছিল উৎসবমুখর। হাজার হাজার ছাত্র ও যুবকের মিলনমেলা বসে বিশাল এই মাঠে। তাদের উদ্বুদ্ধ করতে সেখানে হাজির হয়েছিলেন ডাকসু, চাকসু ও রাকসু’র ভিপিসহ সাবেক ছাত্রনেতারা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিও ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সদর আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী নুরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর।

এককালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সরকারি কলেজের ভিপিও ছিলেন নুরুল ইসলাম বুলবুল। তার নিমন্ত্রণে ছাত্র ও যুব উৎসবে এসেছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। স্থানীয় জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষ নেতারাও অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ উন্নয়ন ফোরাম এই উৎসবের আয়োজন করে।

উৎসবের স্লোগান ছিল,‘সুশাসন ও শান্তির জন্য পরিবর্তন, উন্নত-আধুনিক চাঁপাইনবাবগঞ্জ’। সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতাদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য ও ভিন্নধর্মী এই উৎসব উপভোগ্য হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ জীবনের অর্থ ও দিক নির্দেশনা খুঁজে পান অংশগ্রহণকারী ছাত্র ও যুবকরা। অবশ্য উৎসব পরিণত হয় সব বয়সী মানুষের মিলন মেলায়। বেলা আড়াইটার মধ্যেই কলেজ মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। উৎসবস্থলে প্রবেশ করার সময় কমলা রঙের ক্যাপ প্রদান করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে কমলা রঙে সয়লাব হয়ে যায় পুরো মাঠ। এরপর মাঠের বাইরের রাস্তায় ভীড় করতে থাকে মানুষ। বড় ইন্দারা মোড়, বাতেন খাঁর মোড় ও নিমতলা মোড় মানুষে সয়লাব হয়ে যায়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা চাই এমন এক সমাজ যেখানে অর্থের অভাবে নিজের স্বপ্নকে শেষ করে দিতে হবে না যুবকদের। কোন পরিবারের লালিত স্বপ্নগুলো ঝরে পড়বে না। আমরা চাই সমাজের সংকট, অশীøলতা, মাদক ও নৈতিক অবক্ষয় থেকে আমাদের যুবকরা বেরিয়ে আসুক। পরিবারের সন্তানরা দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরুক। জেলার প্রতিটি প্রান্তরে তৃণমূলের রাস্তা অলিগলি চলাফেরা করার উপযোগী হয়ে ওঠুক। আমাদের অবকাঠামোগুলো গড়ে উঠুক। আমরা চাই, চাঁপাইানবাবগঞ্জ একটি নিরাপদ নগরী হয়ে উঠুক। যেখানে ব্যবসায়ীরা নিরাপদে বাসায় ফিরবে, মা-বোনেরা নিরাপদে রাস্তায় চলাফেরা করবে। তিনি বলেন, আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই, যেখানে যুবকদের দক্ষ করে মানবসম্পদ বানিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়া হবে। সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা নির্বাচিত হলে বেকারত্ব দূর করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। যুবকদের হাতে কাজ তুলে দেবো। তারা যেন পরিবারের চালক হয়ে উঠতে পারে। নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় বানাতে চাই। এই জেলায় ইপিজেড হলে হাজার হাজার তরুণের কর্মসংস্থান হবে। ম্যাংগো ইন্ডাস্ট্রি বানিয়ে যুবকদের কর্মসংস্থানে নিয়ে আসতে চাই। তাহলে আমচাষীরাও এর সুফল পাবে। মানুষগুলো স্বাবলম্বি হবে।

সন্ত্রাস চাঁদাবাজ দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ এবং বসবাসযোগ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ গড়ে তোলার প্রত্যয় জানিয়ে তিনি বলেন, যুবকরা রক্ত দিয়ে নতুন বাংলাদেশ এনে দিয়েছে। আগামিতেও তরুণদের নিয়ে নতুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ গড়তে চাই।

তিনি কারো মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামি দিনে তিনটি আসনেই দাঁড়িপাল্লার নিরব বিপ্লব ঘটাতে হবে। জনগণ আওয়ামী লীগ দেখেছে, বিএনপি দেখেছে। এবার মানুষ দাঁড়িপাল্লাকে দেখতে চায়।

আগামীর চাঁপাইনবাবগঞ্জকে সারাদেশের মধ্যে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন নুরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পরিকল্পিত নগরায়ন করার মাধ্যমে দেশের জন্য মডেল শহর বানানো হবে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা নিরাপদে বসবাস করে ধর্মচর্চা করার সুযোগ পাবেন। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষদের নিয়ে মডেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ হিসেবে গড়ে তুলবো। নির্বাচিত হলে নেতা নয় সেবক হবো। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে প্রশ্রয় দেবো না। কোন অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মনে রাখবেন আমরা মানুষের কল্যানে দেশ গড়ার রাজনীতি করি। সবাইকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে সর্বশক্তি বিনিয়োগ করবো।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ কোরআনের জন্য জীবন দিতে জানে। তারা বিশে^ নেতৃত্ব দিতে পারবে। তিনি উল্লেখ করেন, পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সেনা অফিসারদের হত্যা করেছিল। আলেমদের অত্যাচার গুম ও খুন করেছিল। জুলাই আগস্টের পর আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। কিন্তু একটি দল বিদেশে বসে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে। তা হবে না।

তিনি উল্লেখ করেন, জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে মীর কাসেম আলীসহ কোরআনের পাখি আল্লামা সাঈদীকে হত্যা করা হয়েছে। সেই কষ্টগুলো চাপা দিয়েছিলাম। তা জুলাই আগস্টে ষ্ফুলিঙ্গ হয়েছিল। জুলাই বিপ্লবের পর বিএনপি ২০০ জনকে হত্যা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি হাসিনার রেখে যাওয়া কাজগুলো বিএনপি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি জুলাইকে ধারণ করে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আল্লাহ তায়ালা যে বিজয় দিয়েছেন, তাতে আমরা রেকর্ড করে একটি মডেল করে দিবো। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে আর কোন আধিপত্যবাদ চলবে না। ভারত বিভিন্নভাবে ভয় দেখাতে চেষ্টা করে। আমরা বলি নিজেদের রক্ষা করুন। আমাদের কাছে আসবেন না। তিনি নরুল বুলবুলকে সর্বশক্তি নিয়োগ করে নির্বাচনে পাশ করানোর আহ্বান জানান।

আরেক বিশেষ অতিথি ডক্টর শফিকুল ইসলাম মাসুদ নূরুল ইসলাম বুলবুলকে জনতার এমপি আখ্যা দিয়ে বলেন, আজকের উৎসবের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করবে। তিনি ঐতিহাসিক বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে বলেন, সব যুদ্ধে বিজয়ীরা ছিল যুবক। এই চাঁপাইনবাবগঞ্জের তরুণদের পরাজিত করা যাবে না। নূরুল ইসলাম বুলবুলকে বিশ^ ইসলামী আন্দোলনে সম্পদ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী আস্থা রাখলে দুর্নীতি-চাঁদাবাজ মুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ বানানো হবে। ড. মাসুদ বলেন, একটি দল ডাকসু, জাকসু, চাকসুতে কেউ নাই বলেছিল। কিন্তু বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে ভূমিধস বিজয় হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বলা হচ্ছে ৫/৬ শতাংশ জামায়াতের ভোটার আছে। সুতরাং এখানে আরও বড় বিজয় হবে। ড. মাসুদ বলেন, জামায়াতে ইসলামী ইনসাফপূর্ণ সমাজ গড়তে চায়। তিনি মা বোনদেরও ভোটের যুদ্ধে কাজ করার আহ্বান জানান।

ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, নূরুল ইসলাম বুলবুল বাংলার এরদোয়ান। তিনি বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সবসময় অন্যায় বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশে যারা ইনসাফ কায়েম করতে চায় তাদের একজন তিনি। সাদিক কায়েম হুঁশিয়ারি দেন, জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে সন্ত্রাস-ধর্ষকের ঠিকানা হবে না। যারা টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চায়, তাদের ঠিকানা হবে না। চাঁদাবাজদের ঠিকানা এই দেশে হবে না। তরুণরা ইনসাফের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিবে, ইনশাআল্লাহ। তিনি বলেন, নূরুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে স্বপ্নের চাঁপাইনবাবগঞ্জ গড়া হবে। তিনি স্লোগান তুলেন তারুণ্যের প্রথম ভোট, দাঁড়ি পাল্লার পক্ষে হউক।

এসময় আবৃত্তিকার মাহবুব মুকুল আবৃত্তি করেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা ‘এক আল্লাহ জিন্দাবাদ’।

চাকসু ভিপি ইব্রাহীম হোসেন রনি বলেন, এ ময়দান বিজয়ের ময়দান। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে সবাই ভোট দিয়েছে। নানা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে লাভ হয়নি। হিন্দু, বৌদ্ধ ও অমুসলিমরা আমাদের ভোট দিয়েছে। এবার দাঁড়িপাল্লার ওপর আস্থা রাখুন। আমরা প্রতিদান দেবো। আজকে যারা নিজেদের বড় দল মনে করেন; তাদের বলতে চাই বড় দল দিয়ে চাঁদাবাজি করা যায়, মানুষের মন জয় করা যায় না।

রাকসু ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, আগামি দিনের ব্যালট যুদ্ধে ডাকসু চাকসু ও রাকসুর ছাত্র সংসদের মতো বিজয়ী করতে হবে।

এরপর ডাকসু, চাকসু ও রাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সবংর্ধনা দেওয়া হয়। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আবু বকর উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চাপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমীর হাফেজ আব্দুল আলীম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ড. কেরামত আলী, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবু জর গিফারি, সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক লতিফুর রহমান, জেলা নায়েবে আমীর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের এমপি পদপার্থী ড. মিজানুর রহমান, জেলার নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুখলেসুর রহমান, জেলা শিবির পশ্চিমের সভাপতি মামুন আলী, জেলা পূর্ব সভাপতি সালাহ উদ্দিন।

সমাবেশের বাইরে কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে। তারা আঞ্চলিক ভাষায় জানায় ধানের শীষের হারুণের চেয়ে দাঁড়িপাল্লার বুলবুলকেই ফেমাস লাগছে।

এদিন সন্ধ্যায় ছাত্র ও যুবকদের জন্য শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে পারফর্ম করেন, ঢাকা থেকে আগত সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠি এবং স্থানীয় শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যরা।