দীর্ঘ ৯ বছর ধরে ছেলের ফিরে আসার অপেক্ষায় চোখের পানি ফেলছেন গুমের শিকার সাতক্ষীরার হোমিও চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান জনি’র বৃদ্ধ পিতা শেখ আব্দুর রাশেদ। কাঁদতে কাঁদতে এখন তার চোখের পানিও শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে। আর ছেলেকে ফেরত পেতে এবং তার গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে আদালত থেকে আদালতে দৌড়াতে দৌড়াতে অসুস্থ্য শরীরও আর চলছে না। কিন্তু কোথাও কোন আশার আলো দেখছেন না তিনি। ছেলেকে ফেরত পেতে এবং ক্ষতিপূরণ দিতে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেছেন। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’ উপলক্ষে খুলনার মানববন্ধন ও র‌্যালিতে অংশ নিয়ে এ দাবি জানান তিনি। দেশের অন্যতম শীর্ষ মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’র নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এর আগে খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি র‌্যালী বের হয়ে পিকচার প্যালেস মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও পরিচালনা করেন অধিকার খুলনার ফোকাল পার্সন সাংবাদিক মুহাম্মদ নূরুজ্জামান। দিবসের বিবৃতি পাঠ করেন সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী কে এম জিয়াউস সাদাত। কর্মসূচিতে বক্তৃতা করেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সচিব এডভোকেট নুরুল হাসান রুবা, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নাগরিক ঐক্যের খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী মোতাহার রহমান বাবু, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের সহকারী মহাসচিব ও দৈনিক আমার দেশ’র খুলনা ব্যুরো প্রধান এহতেশামুল হক শাওন, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি ও মানবজমিনের খুলনা ব্যুরো প্রধান মো. রাশিদুল ইসলাম, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এডভোকেট বাবুল হাওলাদার, বিএফইউজের সাবেক নির্বাহী সদস্য ও দৈনিক কালেরকন্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান এইচ এম আলাউদ্দিন, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার কোষাধ্যক্ষ ও দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরো প্রধান আব্দুর রাজ্জাক রানা, সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি ও মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট আলমগীর আশরাফ, ইসলামী আন্দোলন খুলনা মহানগরীর সহ-সভাপতি শেখ মো. নাসির উদ্দিন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের খুলনা মহানগর আহবায়ক এম হুমায়ুন কবির, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) খুলনার সংগঠক আহম্মদ হামিম রাহাত ও গুমের শিকার পাটকল শ্রমিক নেতা মো. ওলিয়ার রহমান। উপস্থিত ছিলেন প্রধান শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম, একুশে টেলিভিশনের খুলনা ব্যুরো প্রধান আশরাফুল ইসলাম নূর, গুমের শিকার পাটকল শ্রমিক নেতা মো. নুরুল ইসলাম, গুম থেকে ফিরে আসা মো. ইমরান হোসেন, বেনাপোলে গুমের শিকার কলেজছাত্র মো. রেজওয়ান হোসেনের ভাই বায়জিদ হোসেন, জুলাই যোদ্ধা সাইফ নেওয়াজ, মিরাজুল ইসলাম ইমন, অধিকার’র হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার জিএম রাসেল ইসলাম, খুলনা ব্লাড ব্যাংকের সভাপতি শেখ ফারুক, মানবাধিকার কর্মী মো. বদরুজ্জামান, মো. কামরুজ্জামান, এডভোকেট শহিদুল ইসলাম, এম এ আজিম, রায়হান মোল্লা, মো. মোস্তফা কামাল রিপন, সাকিব হাসান, আহত জুলাইযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম উজ্জল, এস. এম জসিম উদ্দিন, আব্দুল জব্বার, সাংবাদিক তালুকদার আব্দুল হান্নান, কলেজ শিক্ষার্থী তাসনিম হাসান আফ্রিদি, জান্নাতুল মেহের প্রমুখ।

শেখ আব্দুর রাশেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই হিমেলের নেতৃত্বে পুলিশ জনিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর প্রায় ৯ বছরেও তার সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। ছেলেকে হারিয়ে তাদের সংসার তছনছ হয়ে গেছে। জনির মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তারা অভিযুক্ত সাতক্ষীরা সদর থানার তৎকালীন ওসি এমদাদ হোসেন ও এসআই হিমেলসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের কঠোর শাস্তি এবং জনিকে ফিরিয়ে দিতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, গুম মৌলিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের একটি হাতিয়ার। স্বাধীন দেশে এমন কথা ছিল না যে, গুমের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, জনগণকে সংগঠিত করতে হবে। একই সঙ্গে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও গুম থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়া এখনও যারা ফিরে আসেননি তাদের ফিরে পেতে অধিকার তাদের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।