সাইফুল ইসলাম, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হাটগোপালপুর তৈলপাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক অনন্য খাবার ঘর, ‘ভুটভাট হোটেল’। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় যেন একটি সাধারণ কুড়ে ঘর, কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করলেই বদলে যায় ধারণা। নাম শুনে যেমন অদ্ভুত লাগে, খাবারের স্বাদ পেলে তেমনই মন ভরে যায়। ভোজনরসিকদের কাছে এটি যেন বাড়ির রান্নার মতোই প্রিয় এক ঠিকানা।

নারী উদ্যোক্তা আসমা বেগম জানান, হোটেল শুরু করার সময় অনেকেই সন্দেহ করেছিল। এতো ছোট ঝুপড়ি ঘরে আবার হোটেল হয় নাকি! মামাও ঠাট্টা করে বলেছিলেন,এটা কি হোটেল নাকি ভূটভাট? সেই ঠাট্টাই আজ হোটেলের নাম হয়ে গেছে ভুটভাট হোটেল।

প্রতিদিন সকালবেলা গরম খিচুড়ি, দুপুর ও রাতে ভাতের আয়োজন থাকে এই হোটেলে। তবে বিশেষ জনপ্রিয় খাবার হলো ভূড়িভাজা, হাঁসের মাংস আর কালা ভুনা। ঝিনাইদহ-মাগুরা মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করা দূরদূরান্তের যাত্রীরা শুধু এই ঝুপড়ি ঘরের হোটেলের খাবারের স্বাদ নিতে গাড়ি থামান।

খাবার খেতে আসা গ্রাহক গালীব ও সাইফুল বলেন, ভুটভাট হোটেলের খাবার একেবারে ঘরের মতো। অল্প টাকায় মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়। তাই আমরা বারবার এখানে আসি।

আসমা বেগম একসময় সদর উপজেলার কালাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। অষ্টম শ্রেণিতে তার রোল ছিল ৪, আর তিনি ১৯৯৪ সালের এসএসসি ব্যাচের ছাত্রী। পড়াশোনা শেষ করতে না পারলেও হার মানেননি তিনি। সংসার ও দুই মেয়েকে মানুষ করার দায়িত্ব সামলাতে সামলাতেই ঝুপড়ি ঘরের ভেতর দাঁড় করালেন তার স্বপ্নের হোটেল।

বর্তমানে ভুটভাট হোটেল চালান আসমা বেগম ও তার স্বামী রফিকুল ইসলাম। তবে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আসমার ভূমিকাই মুখ্য। ২০১৫ সালে মাত্র কয়েকজন ক্রেতা দিয়ে শুরু হলেও আজ প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার বেচাকেনা হয় এখানে।

এই হোটেল থেকেই আমি আমার দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। মানুষ যখন বলেছিল ঝুপড়ি ঘরে কি হোটেল হয়, তখন মন ভেঙে গিয়েছিল। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, আজ আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি।

বর্তমানে ভুটভাট হোটেল শুধু একটি ঝুপড়ি ঘরের খাবারঘর নয়। এটি নারী উদ্যোক্তার সংগ্রাম ও সাফল্যের প্রতীক। আসমা প্রমাণ করেছেন পরিশ্রম, দৃঢ় মনোবল আর সাহস থাকলে একজন নারীও পরিবারের ভরসা হয়ে উঠতে পারেন।

আজকের আসমার গল্প তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা, আর ভুটভাট হোটেল ঝিনাইদহের মানুষের কাছে এক গর্বের নাম।