মো. ফিরোজ আহমেদ, পাইকগাছা : খুলনা সাতক্ষীরা বাগেরহাটসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমঞ্চলের খাল বিলসহ বিশেষ করে সুন্দরবন থেকে শামুক নিধন হচ্ছে সুন্দরবন বিশ্বের জন্য এক অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি আমাদের জীবনের রক্ষাকবচ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচায়, আবার মাছ, কাঁকড়া, শামুকসহ অসংখ্য প্রাণীর আশ্রয়স্থল। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, এই সুন্দরবনের নদী-খাল থেকে হুড়মুড় করে শামুক সংগ্রহ করে পাচার করা হচ্ছে। দরিদ্র মানুষ অল্প টাকার লোভে যুক্ত হচ্ছে, আর এর সুযোগ নিচ্ছে বড় ব্যবসায়ী আর পাচারচক্র। শামুক কোনো সাধারণ প্রাণী নয়। এটি পানিকে পরিষ্কার রাখে, নদী-খালের ভারসাম্য বজায় রাখে। মাছ, কাঁকড়া ও অনেক জলজ প্রাণীর প্রধান খাবারও হলো শামুক। যদি এভাবে নির্বিচারে শামুক ধরা চলতে থাকে, তবে মাছ ও কাঁকড়ার সংখ্যাও দ্রুত কমে যাবে। এতে জেলেরা জীবিকা হারাবে, নদী-খালের প্রাণ হারাবে আর পুরো সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যন্ত হবে। আরও বড় ক্ষতি হচ্ছে, অনেকেই শামুক বা মাছ ধরতে বিষ ব্যবহার করছে। এতে একসঙ্গে হাজার হাজার জলজ প্রাণী মরে যাচ্ছে। নদীর প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে, যা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর

সংকেত। কিন্তু সমাধান আছে। সুন্দরবনের ভেতর থেকে শামুক আহরণ না করে উপকূলের চিংড়ি বা মাছের ঘেরে শামুক চাষ করা সম্ভব। বিদেশে শামুকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সঠিকভাবে উদ্যোগ নিলে শামুক চাষ থেকে মৎস্যচাষিরা বাড়তি আয় করতে পারবেন। এতে একদিকে মানুষের জীবিকা টিকবে, অন্যদিকে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যও রক্ষা পাবে। সরকার যদি এ ধরনের উদ্যোগে সহায়তা দেয়, প্রণোদনা দেয়, তাহলে বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরি হবে এবং পাচারচক্রের দৌরাত্ম্যও কমবে।

শামুক পাচার বন্ধ করতে হলে কেবল অভিযান চালানোই যথেষ্ট নয়। পাচারকারীদের আসল হোতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কেবল শ্রমিক পর্যায়ের মানুষ ধরা দিলে সমস্যার সমাধান হবে না। বন বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকে বোঝাতে হবে, শামুক নিধন মানে নিজেদের ভবিষ্যতের জীবিকা ধ্বংস করা। এজন্য স্কুল-কলেজে সচেতন-তা কর্মসূচি, এনজিও ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রচারণা চালানো দরকার।

সুন্দরবনকে টিকিয়ে রাখা মানে আমাদের নিজেদের জীবনকে টিকিয়ে রাখা। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে সুন্দরবনকে বাঁচানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই এখনই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। শামুক নিধন ও পাচার বন্ধ করা শুধু একটি প্রাণীর জীবন রক্ষা নয়, বরং পুরো সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতিকে বাঁচানো। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ রেখে যেতে হলে আমাদের এখনই সতর্ক হতে হবে।