নীলফামারী সংবাদদাতা : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে আমরা অনেক কিছু আশা করছিলাম। কিন্তু আমাদের সব আশা পূরণ হয়নি। আমরা এখনও এটাই মনে করি আমাদের লড়াই এখনও চালিয়ে যেতে হবে। আমরা দেখছি আবারও পুরোনো সিস্টেম ও সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। পুরোনো সংস্কৃতি ফিরে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থান যারা করেছে তারা কিন্তু এখনও জাগ্রত আছে, এখনও রাজপথে আছে। কেউ যদি মনে করে পুরোনো দখলদারিত্ব ও পুরনো সন্ত্রাসের রাজনীতি আবার ফিরে আনবে তাহলে তাদের পরিণতিও স্বৈরাচার হাসিনার মতো হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জুলাইয়ের পদযাত্রার তৃতীয় দিন নীলফামারী জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে অনুষ্ঠিত এক পথসভা তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন সকল শহীদ আমাদের অনুপ্রেরণা। এই মানুষরা জীবন দিয়েছে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্য। যে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকবে না। যে বাংলাদেশে আঞ্চলিক বৈষম্য থাকবে না। যে বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে। সাধারণ মানুষ ভাতের অধিকার পাবেন। শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের অধিকার পাবেন। এই রকম একটি বাংলাদেশের জন্য আমাদের ছেলে-মেয়েরা জীবন দিয়েছে। তিনি বলেন সপ্তম শ্রেণির একটি ছেলে যদি রাস্তায় নেমে পুলিশের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে যেতে পারে, তাহলে আমরা যারা জীবিত আছি তারা কি একটা নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে পারব না। ছোট ছোট ছেলেরা যারা জীবন দিল তাদের জীবনের বিনিময়ে সুন্দর ও স্বপ্নের বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। রংপুরের কৃষক সন্তান আবু সাঈদ, নীলফামারীর সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র রুবেল ইসলাম ও সৈয়দপুরের সাজ্জাদ হোসেনের বিদ্রোহ আমরা মনে রেখেছি। তারা নিজেদের বুকে বুলেট নিয়ে জীবন দিয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানকে ত্বরান্বিত করেছেন। আমরা সেই ইতিহাসকে বুকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে যদি সকল দাবি পূরণ হতো তাহলে আমাদের রাজনৈতিক দল গড়া লাগত না। কিন্তু আমরা দেখছি এক বছর হয়েছে। কোন দাবি পূরণ করা হচ্ছে না। কেবল নির্বাবন নির্বাচন বলে আমাদের সামনে একটা মূলা ঝুলানো হচ্ছে। আমরা এই ধরনের কোন ধোঁকাবাজিতে বিশ্বাস করব না। আমরা অবশ্যই নির্বাচন চাই। আমরা নির্বাচিত সরকার চাই। তবে গণঅভ্যুত্থানে যারা হত্যা করেছে সেই শেখ হাসিনা ও তাদের দোসররা আজ বাংলাদেশের প্রতি এলাকায় লুকিয়ে আছে তাদের গ্রেফতার করে অবশ্য অবশ্য বিচারের আওতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত শহীদ পরিবারের মনে দাউ দাউ করে যে আগুন জ্বলচ্ছে তা কোন দিন নিভবে না।
তিনি আরো বলেন মৌলিক সংস্কার হতে হবে,সংস্কারের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। বাংলাদেশে একটি নতুন সংবিধান লাগবে। আওয়ামী লীগ ও মুজিববাদী সংবিধান ছুঁড়ে ফেলতে হবে। যে সংবিধান জনগণের সংবিধান নয় সে সংবিধান রাখার কোন মানে হয়না।
উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় পদসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও যুগ্ন মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবু সায়েদ লিয়ন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ন সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা সহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
এর আগে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার তৃতীয়দিন দুপুর ১২টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার হাতীখানা কবরস্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সাজ্জাদ হোসেনে কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচি শুরু হয়। কবর জিয়ারতে দোয়াপাঠ করান শহীদ সাজ্জাদ হোসেনের বাবা আলমগীর হোসেন। কবর জিয়ারত শেষে এনসিপি নেতৃবৃন্দ সাজ্জাদের পরিবারের সাথে কথা বলেন।