মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা : যশোরের মনিরামপুরে ভাইরাসজনিত জ্বর, সর্দি-কাশি ও ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিটি গ্রামেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। একই সাথে ডেঙ্গুর দংশনে উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা। ফলে উপজেলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চরম চাপে পড়েছে। চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন শত শত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় করছেন। তবে বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা এত বেশি যে অনেককে বারান্দা কিংবা করিডোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিকেও ছুটছেন।

সম্প্রতি সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, মহিলা ওয়ার্ডে ২০টি বেডের বিপরীতে ৩২ জন রোগী ভর্তি। তার মধ্যে ২২ জনই ভাইরাস জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। পুরু ওয়ার্ডেও একই অবস্থা ২০ বেডে ভর্তি ৩৭ জন রোগী, যাদের মধ্যে ২৫ জনেরই একই লক্ষণ। মহিলা ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স ঝরনা খাতুন বলেন, “রোগীর চাপ দিনকে দিন বাড়ছে। জনবল কম থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”পুরুষ ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স নাজমা বেগম বলেন, “রাতদিন এক করে রোগীদের সেবা দিচ্ছি, তবুও সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।”

জ্বর নিয়ে ছেলে বাদশাহকে ভর্তি করতে আসা জেসমিন খাতুন বলেন, “এখন আমি নিজেই জ্বরে আক্রান্ত। চিকিৎসা নিচ্ছি বারান্দাতেই।”একইভাবে আমেনা খাতুন তার তিন বছরের শিশুপুত্র সিয়ামকে ভর্তি করেছেন। তার মা পলি বেগম জানান,

“এক সপ্তাহ ধরে মেয়ে জ্বরে ভুগছে। এখনও জ্বর কমেনি।”

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অনুপ কুমার জানান, “মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত ৫২১ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে প্রায় সবাই জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া বা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। তিনি জানান, চলতি জুলাই মাসে ২১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগীদের বেশিরভাগ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত।

প্রতিরোধে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “ভিটামিন সি যুক্ত মৌসুমি ফলÑআনারস, পেয়ারা, লেবু ও আমড়া বেশি করে খেতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বাড়তি যতœ নিতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বর্ষাকালে সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য বিভাগকে একসাথে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।