খুলনা শহর সংলগ্ন ভৈরব নদ ও রূপসা নদী দিনের পর দিন দখল হয়ে যাচ্ছে । সেই সাথে ঝুলন্ত পায়খানা ও বিভিন্ন বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি খুলনা শহর রক্ষা বাঁধের ওপর অবৈধভাবে দোকানপাট গড়ে ওঠায় এবং যেখানে সেখানে যত্রতত্র ট্রলার ও নৌকা বেঁধে মালামাল ওঠানামার কারণে বাঁধটির অস্তিত্ব এখন সংকটাপন্ন। ইতোমধ্যেই বাধেঁর বহু স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে।যে কোন মূহুর্তে বড় ধরণের ধ্বস নেমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নব্বই দশকের শুরুতে নদীরকুলের ব্যবসায়ীরা শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি তোলেন। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৩-৯৪ অর্থ বছরে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় সেকেন্ডারী টাউন ইন্ট্রিগেটেড ফ্লাড প্রটেকশন প্রজেক্টের আওতায় খুলনা শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়া হয়্। এই প্রকল্পের আওতায় ২৮/২ পোল্ডারে সাড়ে ৩ কিলোমিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ, ৬ টি রেগুলেটর স্থাপন এবং নদীর তীরের ভাঙ্গন কবলিত খুলনা জেলখানা ঘাট, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল, বড় বাজার, আইডব্লিউটিএ ঘাট, রুজভেল্ট জেটি, আনসার ফ্লাওযার মিল ও দৌলতপুর বি এল কলেজ এলাকায় ২ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার জায়গা রক্ষার কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৩৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। নির্ধারিত সময়ের অনেক পর ১৯৯৮ সালের প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এই প্রকল্পের আওতায় জেলখানা ঘাট থেকে রুজভেল্ট জেটি পর্যন্ত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজকে মোট ১০টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে রুজভেল্ট এলাকায় ২ টি, জেলখানা ঘাট থেকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত দু’টি এবং বড়বাজার এলাকার জুতা পট্রি হয়ে আইডব্লিউটিএ ঘাট পর্যন্ত ৬টি প্যাকেজ ভাগ করা হয়। ব্লক তৈরী করে তা নদীর কুলে প্লেজ করা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বাঁধ নির্মাণকালে ব্যবসায়ীদের সাথে শর্ত ছিল যে, নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন হলে ব্যবসায়ীরা বাঁধের ভিতরের অংশে ব্যবসা করতে পারবে। তবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের ডিজাইন অনুযায়ী ঘর তৈরী করতে হবে।
কিন্তু বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার পর জেলখানা খেয়াঘাট থেকে ৫ নং ঘাট পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা নতুন করে ব্যবসা শুরুর সময় কোন শর্ত মানেননি। ব্যবসায়ীরা বিশেষজ্ঞদের ডিজাইন না নিয়ে ঘর তৈরী করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাঁধ দখল করে কোথাও কোথাও বাঁধের বাইরে গিয়ে নদী দখল করে ফেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোন নিয়মনীতি না মেনে বাঁধ দখল ও নদী দখলের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ঘর তৈরী করায় শহর রক্ষা বাঁধ হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যেই হাসপাতাল ঘাট, কালিবাড়ী, ডেল্টাঘাটসহ বহুস্থানে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক ধ্বসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ।
এদিকে ব্যবসায়ীরা নদী দখল করে তৈরী করেছে দোকান ঘর। সেই সাথে অসংখ্য ঝুলন্ত পায়খানা তৈরী করে নিয়মিত মলমূত্র ত্যাগ করছে। শহরের বিভিন্ন দূষিত বর্জ্য ও পানি নদীতে ফেলা হচ্ছে । এতে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। নদীর উভয় কুল দখলের কারণে নদী দু’টি ক্রমান্বয় সংকুচিত হয়ে পড়েছে।
খুলনা বড় বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যাবসায়ীরা বাঁধ দখল ও নদী দখল করে ঘর তৈরী করেছে। ব্লক সরিয়ে ছিদ্র করে ঘর তৈরী করা হয়েছে। তাদের কারণেই শহর রক্ষা বাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
নদী বিশেষজ্ঞদের মতে, ভৈরব নদ ও রূপসা নদী যেভাবে দখল হচ্ছে এবং মলমূত্র ও বিষাক্ত বর্জ্য ফেলে পানি দূষিত করা হচ্ছে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এ নদী দু’টি ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর ভাগ্য বরণ করতে পারে।